ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি মডার্না ডিসেম্বরের মধ্যেই করোনাভাইরাসের দুই কোটি ডোজ টিকা তৈরি করবে। গতকাল সোমবার কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। করোনার এই টিকা এক মাস অন্তর দুবার দিতে হবে। এক কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত হবে প্রথম কিস্তিতে উৎপাদনের দুই কোটি ডোজ টিকা।
মডার্নার প্রধান নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ব্যানসেল গতকাল বলেছেন, তাঁর কোম্পানি ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা প্রস্তুত করবে।
মডার্নার এই ঘোষণার পর এ কোম্পানির শেয়ারের দামে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে।
১৮ শতাংশ বেড়ে ১৪৯ দশমিক ৫০ ডলার হয়েছে এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য।
মডার্না হচ্ছে দ্বিতীয় ওষুধ কোম্পানি, যেটি তাদের তৈরি টিকা জরুরি প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদনে চেয়ে আবেদন করেছে। এর আগে গত ২০ নভেম্বর ফাইজার কোম্পানি বায়োটেকের সহযোগে নিজেদের তৈরি টিকার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিল।
১০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে এফডিএর চূড়ান্ত অনুমোদনের আশায় রয়েছে কোম্পানি দুটি। ফাইজার বলেছে, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ তারা পাঁচ কোটি টিকা প্রস্তুত করতে পারবে, যার প্রায় অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হবে। মডার্নার মতো এ কোম্পানির তৈরি করোনার টিকাও প্রত্যেক ব্যক্তিকে এক মাস অন্তর দুটি ডোজ করে দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবিক সেবা বিভাগের সেক্রেটারি অ্যালেক্স আজার তাঁর প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ফাইজার ও মডার্নার প্রস্তুতকৃত দুটি টিকাই এফডিএ অনুমোদন পাবে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী এর দ্রুত বণ্টনও শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বড়দিনের আগেই এ দুটি টিকা মানুষকে দেওয়া হচ্ছে, এমনটি দেখতে পাব বলে আমরা আশা করি।’
টিকা বণ্টনের ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যগুলোর ভূমিকা কেমন হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আজার বলেন, অনুমোদন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা সরবরাহের স্বাভাবিক নিয়মে এগুলো পৌঁছানো হবে। ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’–এর মতো অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা নির্ধারণ করবেন কোন হাসপাতাল ও ফার্মেসিতে কোন চালান যাবে। কোন শ্রেণির মানুষ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে, এ সিদ্ধান্তও রাজ্য গভর্নররাই নেবেন বলে উল্লেখ করেন আজার।
ফেডারেল নীতিমালা অনুসরণ করে তাঁরা এসব সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করেন দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান।
স্বাস্থ্যকর্মী, অপরিহার্য কর্মচারী, যেমন: পুলিশ সদস্য ও অরক্ষিত ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ের ডোজগুলো পাবেন। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যেমন: নার্সিংহোমের কর্মীদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আজ ১ ডিসেম্বর সরকারি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) উপদেষ্টাদের একটি প্যানেল বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। তারা নির্ধারণ করবে এ দুটি টিকা কীভাবে বরাদ্দ হবে। আজার বলেন, সিডিসি কর্মকর্তারা দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তাঁদের সুপারিশ দেবেন।
এদিকে হোয়াইট হাউস দ্রুততার সঙ্গে, ৩০ নভেম্বর মডার্না–ঘোষিত ভ্যাকসিনের সফলতার কৃতিত্ব দাবি করেছে। ট্রাম্পের মুখপাত্র মাইকেল বারস এক ই–মেইল বিবৃতিতে দাবি করেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের “অপারেশন রেপ স্পিড”–এর কারণে আমেরিকান নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সফল হয়েছে এ টিকা।
ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় ইতিহাসের যেকোনো ভ্যাকসিন তৈরির চেয়ে পাঁচ গুণ দ্রুততার সঙ্গে এটির প্রস্তুতি সম্ভব হয়েছে।’
তবে কৃতিত্বের দাবিদার যে–ই হোক না কেন, আশাজাগানিয়া এ সংবাদ এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন আমেরিকা ভয়াবহ এক স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। যখন দেশব্যাপী হু হু করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ‘থ্যাংকস গিভিং হলিডে’ উপলক্ষে ভ্রমণ ও জমায়েতের পর এ পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশটির স্বাস্থ্যসেবীরা।