মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান, ব্যাংকিং লেনদেন, যোগাযোগ, শিক্ষা বিনোদন— সবখানেই এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু ডিজিটাল এই সুবিধার পাশাপাশি বেড়েছে ঝুঁকিও। হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে ডিজিটাল ডিভাইস ও মোবাইল ফোন হ্যাক করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেই চলেছে।
হ্যাকারদের নতুন কৌশল
সম্প্রতি হ্যাকাররা একটি নতুন কিছু কৌশল ব্যবহার শুরু করেছে। এই কৌশলে তারা একজন ব্যবহারকারীর সঙ্গে ফোনে (whatsapp, imo) কথোপকথন চালিয়ে যায় এবং একই সঙ্গে অন্য একজন হ্যাকার দূর থেকে ‘এক্সপ্লয়েট কমান্ড’ পরিচালনা করে। এই কমান্ডগুলো ম্যালওয়্যার ইনস্টল করতে, সংবেদনশীল ডেটা চুরি করতে বা ডিভাইসটিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে সরাসরি ফোন করা হয় বা খুদেবার্তায় সহজ শর্তে অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখানো হয়, যাতে ব্যবহারকারীরা নিজেরাই ফোন করতে উদ্বুদ্ধ হন।
যেভাবে কাজ করে এই কৌশল
ব্যক্তিগত তথ্য চুরি: হ্যাকাররা প্রথমে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনের আইপি অ্যাড্রেস ও IMSI নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ চুরি করা হয়।
ফোনকল: হ্যাকাররা ভুক্তভোগীকে ফোন করে কথোপকথনে জড়িয়ে ফেলা হয়।
এক্সপ্লয়েট কমান্ড: ফোনকলে একজন হ্যাকারের কথোপকথন চলমান থাকাকালে অন্য একজন হ্যাকার ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন লক্ষ করে দূর থেকে ‘এক্সপ্লয়েট কমান্ড’ পরিচালনা করতে থাকে।
আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার: অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ডিভাইসগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহারের কথা থাকলেও ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে OTP তথা যে কোনো খুদেবার্তা বাইপাস করতে দেখা যায়। এ পদ্ধতির নাম ম্যান-ইন-দা-মিডেল অ্যাটাক নামে পরিচিত। ব্যবহারকারী কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রাপ্ত OTP তথা যে কোনো খুদেবার্তা অপব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া হ্যাকারদের অন্য আরেকটি কৌশল হলো তারা নিজেরা একটি কাল্পনিক নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হন নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে কিনা। অতঃপর ব্যবহারকারীকে ব্যস্ত রেখে ওই নম্বরটি ক্লোন করে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুযোগ নেন এবং অপকর্ম করে থাকেন। ওই কাজের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি নম্বর ব্যবহার করতে দেখা যায়।
ঝুঁকি:
ডেটা চুরি: সফল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকাররা ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং ডেটা চুরি করতে পারে।
ম্যালওয়্যার ইনস্টল: হ্যাকাররা ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে ডিভাইসকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন:
যদি ফোন রিসিভ করার পর অপর প্রান্ত থেকে কোনো কথা না বলে চুপ থাকে তা হলে ফোনটি কেটে দিন। ফোন দিয়ে যদি অফার বা বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করে তা হলেও কেটে দিন। ফোন দিয়ে যদি কোনো প্রলোভন, অ্যাপস ইনস্টল বা গেম খেলে বিজয়ী হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় লাইনটি কেটে দিন।
সন্দেহজনক ফোনকল কখনই দীর্ঘায়িত করবেন না। আপনার সঙ্গে কথোপকথনের আড়ালে হ্যাকার যদি এক্সপ্লয়েট চালিয়ে ডিভাইসে প্রবেশের চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাকারের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ভেস্তে যাবে।
অপরিচিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ফোনকলগুলোতে সতর্ক থাকুন এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করবেন না।
সন্দেহজনক ওয়েবলিংকে ক্লিক করবেন না এবং অপরিচিত উৎস থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করবেন না। এ ছাড়া আপনার মোবাইল ফোনের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।