ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪

দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আগামী ১৭ জুন উদযাপিত হবে খুশির ঈদ। কর্মজীবী মানুষ এই ধর্মীয় উৎসব স্বজনদের সঙ্গে পালন করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে মূল ঈদযাত্রা শুরু হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে। এ মধ্যে রাজধানীতে কোরবানির পশুর ট্রাক আসা-যাওয়া এবং সড়কে গরুর ট্রাক থামিয়ে চেকিংয়ের নামে পুলিশের চাঁদা আদায়ের আছে বাড়তি ঝামেলা। ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরে ফেরার অন্যতম মাধ্যম সড়কপথ। কিন্তু ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু রংপুর, ঢাকা টু সিলেট ও ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়গুলোর অর্ধশত স্পটে হাটবাজার। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের মূল শ্রোত শুরু হওয়ার আগেই ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চন্দ্রা, এলেঙ্গা, কড্ডা, হাটিকুমরুল মোড় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা, কুমিল্লার গৌরীপুর, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় এখনই যানজট। কয়েকটি স্পটে এখনো দীর্ঘ সময় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। এ অবস্থায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেশ উন্নয়নের পরও ঘরমুখো মানুষের জন্য যানজট ভোগান্তির থাকছেই। যদিও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ দাবি করছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভালো।

দেশের প্রধান ও সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ হাটবাজার, টোল প্লাজায় ধীরগতি, বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড এবং যত্রতত্র ইজিবাইক ও অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো কোনো স্পটে আটকে থাকতে হয় ২-৩ ঘণ্টা, আবার কোথাও কোথাও ৩-৪ ঘণ্টা। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি উদ্ধার, উল্টোপথে গাড়ি আসা এবং যানবাহনের বাড়তি চাপসহ নানা কারণে যানজট দীর্ঘ হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজটপ্রবণ কয়েকটি স্পট হলো নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোল প্লাজা, কুমিল্লার গৌরীপুর, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। এই স্পটগুলোর কারণে পাঁচ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০ ঘণ্টা বা কখনো কখনো আরো বেশি। ভয় রয়েছে সেতু, সড়ক এবং ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা নিয়ে। টোল আদায়ের গতি ধীর হলে দীর্ঘ যানজটের শঙ্কা রয়েছে।

তবে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এবার দুর্ভোগ হবে নাÑ প্রতি বছর এমন আশ^াস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয় না। গত ৭ জুন ছুটির দিনেও ঢাকা-চট্টগাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। দুর্ঘটনাকবলিত একটি ট্রাক উদ্ধার করতে গিয়ে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ রাখায় এ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও চালকরা। ঈদের আগে মহাসড়কটিতে যানজটের এই উৎকণ্ঠা চলাচলরত ঈদ যাত্রীদের মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

যাত্রীসাধারণরা বলছেন, ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে মহাসড়কে যাত্রীর সংখ্যাও দ্বিগুণ বাড়বে। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে কোরবানির গরু বহনকৃত ট্রাকের সংখ্যা। সব মিলিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট শঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারী স্টার লাইন পরিবহনের চালক জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দৈনিক গড়ে ২৫ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সাড়ে ৩ ঘণ্টায় এখন ফেনী পাড় হওয়া যায় না। কিন্তু অনেক সময় আরও বেশি লেগে যাচ্ছে। ঈদে সেই সময় আরও বাড়তে পারে। তবে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থান থেকে ঈদ মৌসুমে কম গতির ইজিবাইক ও অটোরিকশায় চলাচল বন্ধ করতে হবে যানজটের কবল থেকে রেহাই পেতে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কর্তব্যরত হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মালিকানাধীন গাড়ির কারণে যানজট দূর করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তখনই যানজট দীর্ঘ হতে থাকে। এশিয়া ট্রান্সপোর্ট পরিবহনের চালক সামছুল আলম জানান, সড়কে গাড়ির খুব চাপ রয়েছে। মহাসড়কে কম গতির যানবাহনগুলো মহাসড়কের বিভিন্ন স্ট্যান্ডে এলোপাতাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের মতো বড় গাড়িগুলো চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পথে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায় ছোট গাড়ির জন্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়া থেকে মহাসড়কের সীতাকুন্ড এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, এছাড়াও রাস্তা বন্ধ রেখে মহাসড়কের মাঝপথে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে মহাসড়কের পাশে প্রচুর অবৈধ স্থাপনা ও হাটবাজার গড়ে ওঠায় যানবাহন চলাচলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ৮টি পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা করা হচ্ছে। পয়েন্টগুলো হলোÑ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক স্ট্যান্ড, ১০তলা ভবন, শিমরাইল মোড়, সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোল প্লাজা এলাকা। এর মধ্যে সাইনবোর্ড, ১০তলা ভবন, শিমরাইল মোড়, মোগরাপাড়া এলাকায় সবসময় যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। অন্যদিকে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলেই টোল প্লাজা এলাকায় যানজট মোগরাপাড়া এলাকা ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও মেঘনা ও গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব এবং মহাসড়কে যানবাহন বিকল কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা যানজটের অন্যতম বড় কারণ হতে পারে। এছাড়া ছোট ছোট কম গতির যানবাহন সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান মহাসড়কে চলাচল করায় যানজট শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সওজের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সড়কের পাশে কলকারখানা, বাজার, যত্রতত্র ইউটার্ন, যাত্রী ওঠানামা, সরু ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে যানজট হতে পারে বিভিন্ন স্থানে।
এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই এ কে এম শরফুদ্দিন জানান, যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে অন্যান্যবারের মতো এবারও আমরা মহাসড়কে নিয়োজিত থাকব। যেসব পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা রয়েছে ওই সব পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি মোবাইল টিম, হোন্ডা টিম, অ্যাম্বুলেন্স টিম থাকবে। এছাড়া মহাসড়কে যেকোনো যানবাহন বিকল হয়ে গেলে কিংবা কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত সরানোর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় এবং মদনপুর অংশে দুটি রেকার রাখা হবে।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে টোল প্লাজার প্রত্যেকটি ব্যুথ যেন সচল থাকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm