দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আগামী ১৭ জুন উদযাপিত হবে খুশির ঈদ। কর্মজীবী মানুষ এই ধর্মীয় উৎসব স্বজনদের সঙ্গে পালন করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে মূল ঈদযাত্রা শুরু হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে। এ মধ্যে রাজধানীতে কোরবানির পশুর ট্রাক আসা-যাওয়া এবং সড়কে গরুর ট্রাক থামিয়ে চেকিংয়ের নামে পুলিশের চাঁদা আদায়ের আছে বাড়তি ঝামেলা। ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরে ফেরার অন্যতম মাধ্যম সড়কপথ। কিন্তু ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু রংপুর, ঢাকা টু সিলেট ও ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়গুলোর অর্ধশত স্পটে হাটবাজার। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের মূল শ্রোত শুরু হওয়ার আগেই ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চন্দ্রা, এলেঙ্গা, কড্ডা, হাটিকুমরুল মোড় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা, কুমিল্লার গৌরীপুর, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় এখনই যানজট। কয়েকটি স্পটে এখনো দীর্ঘ সময় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। এ অবস্থায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেশ উন্নয়নের পরও ঘরমুখো মানুষের জন্য যানজট ভোগান্তির থাকছেই। যদিও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ দাবি করছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভালো।
দেশের প্রধান ও সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ হাটবাজার, টোল প্লাজায় ধীরগতি, বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড এবং যত্রতত্র ইজিবাইক ও অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো কোনো স্পটে আটকে থাকতে হয় ২-৩ ঘণ্টা, আবার কোথাও কোথাও ৩-৪ ঘণ্টা। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি উদ্ধার, উল্টোপথে গাড়ি আসা এবং যানবাহনের বাড়তি চাপসহ নানা কারণে যানজট দীর্ঘ হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজটপ্রবণ কয়েকটি স্পট হলো নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোল প্লাজা, কুমিল্লার গৌরীপুর, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। এই স্পটগুলোর কারণে পাঁচ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০ ঘণ্টা বা কখনো কখনো আরো বেশি। ভয় রয়েছে সেতু, সড়ক এবং ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা নিয়ে। টোল আদায়ের গতি ধীর হলে দীর্ঘ যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
তবে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এবার দুর্ভোগ হবে নাÑ প্রতি বছর এমন আশ^াস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয় না। গত ৭ জুন ছুটির দিনেও ঢাকা-চট্টগাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। দুর্ঘটনাকবলিত একটি ট্রাক উদ্ধার করতে গিয়ে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ রাখায় এ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও চালকরা। ঈদের আগে মহাসড়কটিতে যানজটের এই উৎকণ্ঠা চলাচলরত ঈদ যাত্রীদের মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
যাত্রীসাধারণরা বলছেন, ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে মহাসড়কে যাত্রীর সংখ্যাও দ্বিগুণ বাড়বে। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে কোরবানির গরু বহনকৃত ট্রাকের সংখ্যা। সব মিলিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট শঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কে চলাচলকারী স্টার লাইন পরিবহনের চালক জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দৈনিক গড়ে ২৫ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সাড়ে ৩ ঘণ্টায় এখন ফেনী পাড় হওয়া যায় না। কিন্তু অনেক সময় আরও বেশি লেগে যাচ্ছে। ঈদে সেই সময় আরও বাড়তে পারে। তবে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থান থেকে ঈদ মৌসুমে কম গতির ইজিবাইক ও অটোরিকশায় চলাচল বন্ধ করতে হবে যানজটের কবল থেকে রেহাই পেতে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কর্তব্যরত হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মালিকানাধীন গাড়ির কারণে যানজট দূর করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তখনই যানজট দীর্ঘ হতে থাকে। এশিয়া ট্রান্সপোর্ট পরিবহনের চালক সামছুল আলম জানান, সড়কে গাড়ির খুব চাপ রয়েছে। মহাসড়কে কম গতির যানবাহনগুলো মহাসড়কের বিভিন্ন স্ট্যান্ডে এলোপাতাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের মতো বড় গাড়িগুলো চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পথে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায় ছোট গাড়ির জন্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়া থেকে মহাসড়কের সীতাকুন্ড এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, এছাড়াও রাস্তা বন্ধ রেখে মহাসড়কের মাঝপথে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে মহাসড়কের পাশে প্রচুর অবৈধ স্থাপনা ও হাটবাজার গড়ে ওঠায় যানবাহন চলাচলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ৮টি পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা করা হচ্ছে। পয়েন্টগুলো হলোÑ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক স্ট্যান্ড, ১০তলা ভবন, শিমরাইল মোড়, সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোল প্লাজা এলাকা। এর মধ্যে সাইনবোর্ড, ১০তলা ভবন, শিমরাইল মোড়, মোগরাপাড়া এলাকায় সবসময় যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। অন্যদিকে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলেই টোল প্লাজা এলাকায় যানজট মোগরাপাড়া এলাকা ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও মেঘনা ও গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব এবং মহাসড়কে যানবাহন বিকল কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা যানজটের অন্যতম বড় কারণ হতে পারে। এছাড়া ছোট ছোট কম গতির যানবাহন সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান মহাসড়কে চলাচল করায় যানজট শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে সওজের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সড়কের পাশে কলকারখানা, বাজার, যত্রতত্র ইউটার্ন, যাত্রী ওঠানামা, সরু ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে যানজট হতে পারে বিভিন্ন স্থানে।
এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের টিআই এ কে এম শরফুদ্দিন জানান, যাত্রীদের ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে অন্যান্যবারের মতো এবারও আমরা মহাসড়কে নিয়োজিত থাকব। যেসব পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা রয়েছে ওই সব পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি মোবাইল টিম, হোন্ডা টিম, অ্যাম্বুলেন্স টিম থাকবে। এছাড়া মহাসড়কে যেকোনো যানবাহন বিকল হয়ে গেলে কিংবা কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত সরানোর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় এবং মদনপুর অংশে দুটি রেকার রাখা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে টোল প্লাজার প্রত্যেকটি ব্যুথ যেন সচল থাকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সওজের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, সড়কে মেরামতযোগ্য বড় সমস্যা নেই। হাইওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক হাইওয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের পেট্রোল টিম নিয়োজিত থাকবে। হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্য যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১৪ কিলোমিটারে ভোগান্তি হতে পারে ঈদযাত্রায়। প্রায়ই রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কে যানজট হয়। ঈদযাত্রায়ও এ দুই মহাসড়কের যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারে দুর্ঘটনা ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজটের আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি রয়েছে। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ না হওয়ায় ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে থ্রি-হুইলার দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে। যাত্রীসাধারণ ও চালকরা যানজট নিরসনে মহাসড়কেও ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছে। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গাফিলতি ও ধীর গতির কারণে দীর্ঘদিনেও সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের চার লেনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। যার কারণে বিগত কয়েক বছর যাবত ঈদ যাত্রায় যানজটের নাকালে চালক-যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চালকরা জানান, পুলিশের নির্দেশনা মেনে গাড়ি চালালে যানজটের সম্ভাবনা খুবই কম। ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন যাতে না চলাচল করতে পারে সে জন্য প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনে ঠিকভাবে আসতে পারলেও এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত দুই লেনে প্রবেশ করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়।
মহাসড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মিজান সারোয়ার জানান, সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ঈদুল ফিতরে চার কিলোমিটার ব্যবহারের উপযোগী করে দেয়া হয়। এবারের ঈদে নতুন করে আরও চার কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় ওই চার কিলোমিটারও ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হবে। এবারের ঈদে ঘরমুখী মানুষ খুব একটা সমস্যায় পড়বেন না বলে মনে করেন তিনি।
বিগত তিনটি ঈদযাত্রায় মহাসড়ক পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজট বেড়েছে। গত বছর ঈদুল ফিতরে মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০টি। একই বছরের ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৯টি এবং চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে এক বছরের ব্যবধানে দুর্ঘটনা সংখ্যা ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩টি। গত ঈদযাত্রায় ৪ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৫৩টি গাড়ি বিকল ও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে ঈদযাত্রার শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বাসেক) বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে তারা সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঈদুল ফিতরের ন্যায় টোল ব্যুথ বাড়ানো ও মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোল ব্যুথ বসানো হচ্ছে।
বাসেক’র বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, সেতু দিয়ে যত ফিটনেসবিহীন যানবাহন কম আসবে ততই দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল কম হবে। এতে যানজটের আশঙ্কাও কম থাকবে। সেতুর পাশে যত যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকবে ততই যানজটের লক্ষণ থাকে। এজন্য ভাঙতি টাকা দিয়ে টোল পরিশোধ করতে চালকদের সচেতন করা হচ্ছে। এতে সেতুর টোল পরিশোধ করতে ভাঙতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। তাছাড়া ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারও টোল ব্যুথ বাড়ানো এবং মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা টোল ব্যুথ স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অন্য সময়ের চেয়ে মহাসড়কে পশুবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে সেতু দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ঈদুল আজহায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, এ বছর বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। পশুবাহী ট্রাকগুলো ইতোমধ্যে চলাচল শুরু করেছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে মৌসুমি ফলের ট্রাকভর্তি গাড়ি ঢাকার দিকে যাচ্ছে। এতে পশু ও মালামাল পরিবহন বেড়েছে। ফলে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ এমনিতেই বেড়ে গেছে। মহাসড়কে পরিবহন চলাচল নির্বিঘœ করতে জেলা পুলিশের সাত শতাধিক সদস্য পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে পুলিশ মাঠে থাকে সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, সেতুর উপর যানবাহনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে কিভাবে সেটাকে অতিদ্রুত রিমুভ করা যায় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আজহায় মহাসড়কে মাটিবাহী ট্রাক ও কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া রাস্তার পাশে পশুর হাট না বসিয়ে রাস্তা থেকে দূরে বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘেœ করতে গাজীপুর পুলিশ প্রশাসন, পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাদের নেয়া পদক্ষেপ অনুযায়ী এবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও চন্দ্রা এলাকায় যানজট হবে না বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন। গাজীপুর মহানগর পুলিশ এরই মধ্যে চান্দনা চৌরাস্তায় আসন্ন ঈদযাত্রায় ট্রাফিক সচেতনতা ও যানবাহনের শৃঙ্খলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা উপলক্ষে ট্রাফিক পুলিশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আসন্ন ঈদযাত্রায় মানুষ যাতে নির্বিঘেœ ঘরে ফিরতে পারে সে জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে পুলিশকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি কোরবানির পশুর হাটের ভেতরে গরু লোড-আনলোড হবে, রাস্তায় লোড-আনলোড হতে পারবে না, রাস্তায় গরুবাহী ট্রাক থাকতে পারবে না। ট্রাফিক সচেতনতায় গণপরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গার্মেন্টসের মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে সচেতনতার জন্য তাদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে। এছাড়া হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল ও অনুমোদনহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, অটোরিকশাসহ সকল অযান্ত্রিক যানবাহন যেন মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও আটক করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘেœ করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের গাড়িগুলো গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর চন্দ্রা এলাকা দিয়ে বেশি চলাচল করে। এতে চন্দ্রা এলাকায় ঈদের সময় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যাতে চন্দ্রা এলাকা যানজটমুক্ত থাকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবো বিশ্বরোড থেকে বরপা, ঢাকা-বাইপাস, রূপসী-কাঞ্চন সড়কের কালাদি থেকে হাটাবো পর্যন্ত, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের ইছাখালী মোড় থেকে ফজুর বাড়ি, হারিন্দা থেকে হাবিবনগর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার যানজটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চরম ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে এসব সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে গরুবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, সাধারণ যানবহন আটকে যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় উপজেলার ইছাখালী থেকে মুশুরী ফজুর বাড়ি পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে ৩শ’ ফুট সড়ক দিয়ে প্রবেশ করা ডেমরা ও রূপসীমুখী শত শত যানবাহন আটকে থাকে দিনভর। স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান নয়ন বলেন, গত ৭ মাস যাবৎ এ সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় প্রতিদিন এভাবে যানজট লেগে থাকে। এতে সাবরেজিস্ট্রি অফিস, সরকারি হাসপাতাল, থানা ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন ভোগান্তি পোহান।
একই চিত্র রূপসী-কাঞ্চন সড়কের হাটাবো থেকে ঢাকা বাইপাসের কালাদি মোড় পর্যন্ত। এখানে স্থানীয় শিল্প কারখানার ট্রাকগুলো ঢাকা বাইপাস হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে কাঞ্চন বাজারসহ মুড়াপাড়া বাজারগামী জনসাধারণের চরম ভোগান্তি থাকে। এখানকার চিত্রও নিত্যদিনের বলে জানান স্থানীয় গাড়ি চালক ইমরান।
দক্ষিণবাগের বাসিন্দা সুখেন সরকার বলেন, ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণকাজ চলছে গত ৩ বছর ধরে। এ সড়কের গোলাকান্দাইল মোড় থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সব সময় যানজট লেগে থাকে। মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তায় যাতায়াত করতে ব্যয় হয় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। এতে আমরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। রূপসীর বাসিন্দা আতাউর রহমান সানী বলেন, সিটি গ্রুপের ট্রাকগুলো বেশির ভাগ সময় সড়কের পাশে পার্কিং করে রাখায় রূপসী এলাকায় যানজট হয়। অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বরাবো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সরু থাকায় বাসগুলো যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী তোলেন। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট ভোগান্তি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বাইপাস সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বাইপাসে নির্মাণকাজের জন্য স্থানে স্থানে মালামাল লোড-আনলোড হয়। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। আমরা প্রতিদিন ২টি ইউনিটে ২০ জনের পুলিশ সদস্য ও আনসারদের নিয়ে কাজ করছি। সড়কের কাজ যতদিন চলবে ততদিন এটার স্থায়ী সমাধান সম্ভব না।
এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর আশরাফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা সিলেট মহাসড়কে রূপসী, বরপা, তারাবো এলাকায় মাঝে মাঝে যানজট হয়ে থাকে। তবে এখন কুরবানির পশুর হাটের প্রভাব রয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায়। এসব নিয়ে আমরা মিটিং করছি। সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।