একজন মুসলিম নারীকে সহ্য করতে পারছে না ‍গুজরাটের সেই হিন্দু পরিবারগুলো!

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪

‘সংস্কৃতির শহরে আপনাকে স্বাগত’- ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ শহর থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বরোদা শহরে পৌঁছতেই বিভিন্ন জায়গায় টাঙানো সাইনবোর্ডে একথা আপনার চোখে পড়বে।

বরোদার হরণি এলাকার একটি কলোনি গত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে। ওই এলাকায় অবস্থিত ‘মোটনাথ রেসিডেন্সি’তে মুখ্যমন্ত্রী আবাসন প্রকল্পের আওতায় আবাসনের ৬৪২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি বরাদ্দ করা হয়েছিল এক মুসলিম নারীকে। এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রতিবাদ করেন ওই আবাসনেরই ৩২ জন বাসিন্দা।

ওই নারীকে বরাদ্দ করা ফ্ল্যাট বাতিলের জন্য একটি আবেদনও জমা পড়েছে। এর একটি প্রতিলিপি বিবিসি গুজরাটির কাছেও আছে।

উল্লেখ্য, কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন শহরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি ভাড়া পেতে মুসলিমদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এমন অভিযোগও উঠেছে।

বরোদার ঘটনায় গত ৫ জুন মোটনাথ আবাসনের ‘বিক্ষুব্ধ’ বাসিন্দারা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য যে সরকারি আবাসের প্রকল্প রয়েছে তার আওতায় ওই মুসলিম নারীকে বরাদ্দ করা ফ্ল্যাটটি বাতিল করে তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করার আবেদন জানিয়েছেন। ২০১৮ সালে বরাদ্দ করা হয়েছিল ওই ফ্ল্যাট।

ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বিবিসি গুজরাটি টিম ‘মোটনাথ রেসিডেন্সি’তে পৌঁছায়।

শহরের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব
মোটনাথ রেসিডেন্সির ঢোকার মুখে যে গেট রয়েছে সেখানে রামের একটি বড় ছবি রয়েছে। বাড়ির দরজা-জানালায় সর্বত্র কমলা রঙের পতাকার দেখা মেলে।

সোসাইটিতে ঢোকামাত্রই গেটে দেখা হলো আবাসনের সভাপতি ভবনভাই যোশীর সাথে। ঘটনার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘যদি পুরো বসতিই হিন্দুদের হয় তাহলে একজন মুসলিমকে কেন ঘর বরাদ্দ করা হলো, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’

তার অভিযোগ এই ঘটনার জন্য দায়ী বরোদার পৌরসভা। তবে পৌরসভা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, সমস্ত নিয়ম মেনে ওই নারীকে ফ্ল্যাটটি বরাদ্দ করা হয়েছে। একইসাথে জানানো হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো সরকারি প্রকল্পে বৈষম্য করা যায় না।

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই মুসলিম নারীর সাথে যোগাযোগ করা হয় বিবিসি গুজরাটির পক্ষ থেকে।

তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু জানিয়েছেন, ‘গত ছয় বছর ধরে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে এবং নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি বাপের বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।’

এই পুরো ঘটনাতে উদ্বিগ্ন সমাজকর্মীরা। তাদের মতে এই জাতীয় ঘটনা ‘শহরের ভাবমূর্তি নষ্ট’ করে এবং এটি ‘সামাজিক সংহতির চেতনার বিরুদ্ধে’।

ধর্মের ভিত্তিতে কলোনি?
এ ঘটনার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মোটনাথ রেসিডেন্সির সভাপতি ভবনভাই যোশী বিবিসি গুজরাটির কাছে দাবি করেন যে ওই মুসলিম নারীকে ফ্ল্যাট দেয়ার বিষয়ে বিরোধিতা শুধুমাত্র ৩২ জন সদস্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সর্বসম্মতভাবে এর বিরোধিতা করেছিলেন।’

তবে বিবিসি গুজরাটি স্বাধীনভাবে তার এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

এই ঘটনায় পৌরসভার কর্মকর্তা এবং লটারির মাধ্যমে আবাসন বরাদ্দ সম্পর্কিত বিষয়েও তদন্তের দাবি করছেন আবাসনের সভাপতি।

‘বিক্ষুব্ধ’ বাসিন্দারা তাদের আবেদনে লিখেছেন, ‘হরণি একটি হিন্দু অধ্যুষিত শান্তিপূর্ণ এলাকা। আশপাশের চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মুসলিম জনবসতি নেই।’

‘এমন একটি এলাকায় সরকারের নিয়ম বিবেচনা না করে বা ভবিষ্যতের কথা না ভেবে আমাদের আবাসনে একটি মুসলিম পরিবারকে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে।’

যোশী বলেন, ‘এখানে হিন্দু পরিবারের জন্য ৪৬১টি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। মনে হচ্ছে, এক্ষেত্রে কোনো বড় ভুল হয়ে গেছে।’

আবাসনের বাসিন্দাদের যুক্তি হলো, হরণি ‘উপদ্রুত অঞ্চলের’ অন্তর্ভুক্ত। তাই সেখানে ‘দ্য গুজরাট প্রহিবিশন অফ ট্রান্সফার অফ ইম্মুভেবল প্রপার্টি অ্যান্ড প্রভিশন ফর প্রোটেকশন অফ টেনান্টস ফ্রম এভিক্সন ফ্রম প্রিমাইসেস ইন ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট’ বা ‘ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট’ প্রযোজ্য। তাই তাদের দাবি যুক্তিযুক্ত।

তবে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নীলেশ পারমার পুরো ঘটনা এবং বিক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রতিবাদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘এই কলোনি বরাদ্দের জন্য ২০১৭ সালে লটারি হয়েছিল। আর আবাসন বরাদ্দ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে।’

‘তখন এই এলাকা ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্টের আওতায় না থাকায় ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না।’

তিনি জানিয়েছেন, সরকারি আবাসনের বরাদ্দ কখনোই ধর্মের ভিত্তিতে হতে পারে না।

‘সরকারের কোনো প্রকল্পই ধর্মভিত্তিক নয়। নিয়ম মেনেই ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে,’ বলেন তিনি।

‘তবে এখন এই এলাকাটি ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্টের আওতায় রয়েছে তাই সেখানে ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।’

অন্যদিকে, পৌরসভার ওই কর্মকর্তার যুক্তির বিরোধিতা করে আবাসনের সভাপতি জোশী বলেন, ‘যদি ধরে নেয়া হয় যে ডিস্টার্বড অ্যাক্ট এরিয়াস সেই সময় কার্যকর ছিল না, তাহলেও বরাদ্দের বিষয়টিকে ঠিক বলা যায় না। পরে এই এলাকাকে ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্টে অন্তর্ভুক্ত করার পিছনে নিশ্চই কোনো কারণ ছিল। কিছু পরিস্থিতি তৈরী হয়ে থাকতে পারে।’

‘এসব বিষয়কে মাথায় রেখে বুঝতে হবে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করা কিন্তু আমাদের উদ্দশ্য নয়।’

মোটনাথ রেসিডেন্সির আরো কয়েকজন বাসিন্দা ওই মুসলিম নারীকে অন্যত্র ফ্ল্যাট দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আবাসনেরই এক সদস্যের দাবি, ওই মুসলিম নারীকে থাকতে দিলে তার ‘প্রভাব’ পড়তে পারে ওই এলাকায়। তিনি বলেন, ‘এই একটি ঘটনাই এলাকায় মুসলিমদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়িয়ে দেবে।’

আবাসনের অন্য এক সদস্য বলেন, ‘মুসলিম নারীদের খাদ্যাভ্যাস ভিন্ন। তাই তাদের এখানে ঘর দেয়া উচিত নয়।’

‘আমাদের প্রতিবাদ পৌরসভার বিরুদ্ধে’
বরোদার নবনির্বাচিত সাংসদ ড. হেমাঙ্গ জোশীও ওই আবাসনের বিক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের আবেদনের বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি এমন একটি সমাধান খুঁজে বের করার কথা বলেছেন যাতে ওই মুসলিম নারীকে কোনোরকম সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়, আর বাকিদের দাবিও মেনে নেয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্টের আওতায় থাকা এলাকায় এমন হওয়ার কথা নয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় (ফ্ল্যাট বরাদ্দ করার প্রক্রিয়ায়) কোনো ত্রুটি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

‘এখন যা করতে হবে সেটা এ কথা মাথায় রেখেই করতে হবে যে যাকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে তার নিজের বাড়ির স্বপ্ন যেন না ভাঙে আর একইসাথে সমাজের বাকি মানুষের দাবিও পূরণ হয়। যাই হবে তা সুখের হবে।’

সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ওই মুসলিম নারীর বাবা।

তিনি বলেছেন, ‘এ জাতীয় ঘটনা দুঃখজনক। আমাদের পরিবার শিক্ষিত। আমরা সমাজের অন্যান্যদের সাথে বাঁচতে চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় সমাজ তার অনুমতি দেয় না।’

ওই নারীকে বোন বলে সম্বোধন করে ‘মোটনাথ রেসিডেন্সির’ সভাপতি ভবনভাই যোশী অবশ্য জানিয়েছেন নিজের ফ্ল্যাটে এসে থাকতে পারেন ওই নারী। তার দাবি, এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তাদের এই প্রতিবাদ পৌরসভার বিরুদ্ধে।

যোশী বলেন, ‘আমাদের প্রতিবাদ পৌরসভার বিরুদ্ধে। বাড়িটি কিন্তু ওই বোনের। তিনি এসে থাকতে পারেন। আমরা কখনো তাকে বাধা দিইনি।’

তবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ২০১৮ সালে ওই ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করা হলেও ওই নারী কখনো সেখানে তার পরিবারের সাথে বাস করেননি। যদিও পৌরসভাকে ৫০ হাজার টাকা কর দিয়েছেন তিনি (মুসলিম নারী) এবং এই ফ্ল্যাটও তারই নামে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

বিবিসির গুজরাটি টিম যখন ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছায় তখন সেখানে তালা দেয়া ছিল।

ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট কী?
১৯৮৬ সালে গুজরাটে ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট চালু করা হয়। ১৯৯১ সালে এটি আইনে পরিণত হয়।

ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট অনুযায়ী, উপদ্রুত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এমন জায়গায় সম্পত্তি বিক্রির আগে কালেক্টরের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। প্রতি পাঁচ বছরে একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই আইনের আওতায় প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন এলাকা যোগ করা হয়।

এই আইনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আইনজীবী শামশাদ পাঠান বলেছেন, ১৯৮৬-৮৭ সালে আহমেদাবাদে দাঙ্গার পরে এই আইন কার্যকর করার উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুদের অঞ্চল ছেড়ে যাওয়া থেকে আটকানো।

তিনি বলেন, ‘কালেক্টর বিক্রির দলিল যাচাই করে এবং পুলিশের মতামতের ভিত্তিতে অনুমোদন দেন, যাতে হঠাৎই কোনো সম্পত্তি কেনা না হয়।’

এই আইনের অধীনে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার রয়েছে কালেক্টরের। উপদ্রুত ঘোষিত অঞ্চলগুলোর আশপাশে ৫০০ মিটার পর্যন্ত প্রযোজ্য এই আইন।

উল্লেখ্য, গুজরাট সরকার ২০১৯ সালে এই আইনে পরিবর্তন আনে। সেখানে আইন লঙ্ঘনের অপরাধে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান দেয়া হয়।

২০২০ সালে ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট নিয়ে আলোচনার সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি বলেছিলেন, ‘কোনো হিন্দু ব্যক্তির মুসলিম ব্যক্তির কাছে সম্পত্তি বিক্রি করা উচিৎ নয়। কোনো মুসলিম ব্যক্তিরও হিন্দু ব্যক্তিকে সম্পত্তি বিক্রি করা ঠিক নয়।’

‘এই আইন সেই সব অঞ্চলে প্রযোজ্য যেখানে দাঙ্গা হয়েছে। যাতে ওদের (মুসলিমদের) বোঝানো যায় যে তাদের (মুসলিমদের) নিজেদের এলাকাতেই সম্পত্তি কিনতে হবে।’

আহমেদাবাদের আইনজীবী দানিশ কুরেশি উপদ্রুত এলাকা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে ২০১৮ সালে গুজরাট হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘রাজ্য সরকার যখন কাউকে বাড়ি-ঘর বরাদ্দ করে তখন সেখানে ধর্মীয় বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়। সরকারের কোনো ধর্ম নেই। তারপরও যদি কেউ এর বিরোধিতা করেন, তাহলে সেটা সংবিধান লঙ্ঘন করা।’

বরোদার অধ্যাপক ভরত মেহতা বিষয়টিকে ‘সংস্কৃতিমনস্ক শহর বরোদার ভাবমূর্তি নষ্ট’ করার মতো ঘটনা বলে মনে করেন।

সামাজিক বৈষম্য দূর করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মতে, ওই কলোনিতে একটি নয়, দশটি মুসলিম পরিবারকে ঘর দেয়া উচিত।’

‘কারণ এটা করলেই একটা ভারত তৈরি হবে। এরকম ছোট ছোট ভারত তৈরী করলেই ভেদাভেদ দূর হয়ে যাবে।’

অন্য ছবি
আবাসিক নম্রতা পারমার বৈষম্যহীন এক সমাজের কথা বলে জানিয়েছেন, তিনি খুশি তার সন্তানরা সেই পরিবেশে বড় হচ্ছে।

বিবিসি গুজরাটিকে তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি তখনই বিকশিত হয় যখন আন্তঃধর্মীয় মানুষ অর্থাৎ হিন্দু, মুসলিম, শিখ এবং খ্রিস্টান সবাই একসাথে থাকে।’

‘পাঠ্যবইতে শিশুদের আমরা এটাই শিখিয়ে থাকি। সত্যি কথা বলতে কী, পাঠ্যপুস্তকে যা লেখা আছে সমাজে আমরা সেভাবেই বাস করি।’

বরোদার হাতিখানা এমনই একটি অঞ্চল যেখানে প্রচুর মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দা ইসমাইল প্যাটেল বিবিসি গুজরাটিকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার কিছু জায়গায় হিন্দুরা বাস করে এবং ব্যবসা করে। আমরা একে অপরকে অনেক সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করে থাকি।’

‘এছাড়া এমন হিন্দু ব্যবসায়ী আছেন যাদের দোকানের মালিক মুসলিম। আমরা সবাই একে অপরকে ভালবেসে একসাথে বাঁচি। একে অপরের ধর্মকে সম্মান করি। এভাবেই তো একটি দেশ তৈরি হয়।’

মোটনাথ রেসিডেন্সির ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন মুসলিম নারী হিন্দু এলাকায় ঘর পেয়েছেন এই বিষয়টিকে সমাজের বুঝতে এবং মেনে নিতে হবে।’

‘মানুষের উচিত একে অপরকে খোলাখুলিভাবে স্বাগত জানানো। মুসলিম সমাজেরও উচিত এ জাতীয় (বৈষম্যমূলক) মনোভাব ত্যাগ করা।’

মোটনাথ রেসিডেন্সি নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ‘ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট’। রাজ্যে এই আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এই আইন নিয়ে ক্রমাগত বিতর্ক হয়েছে।

পক্ষে না বিপক্ষে
‘ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট’ আইনের বিরুদ্ধে মুসলিমদের টার্গেট করে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।

আইনজীবী দানিশ কুরেশি একে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। ভরত মেহতার মতে, ‘এই আইনটি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে মুসলিমদের বাস করতে বাধ্য করার পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্যকেও বাড়াচ্ছে।’

এই আইনের কারণে মুসলিমদের জন্য সম্পত্তি কেনাবেচা কঠিন হয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বরোদার বাসিন্দা অমর রাণাকেও একই সমস্যার সাথে যুঝতে হয়েছে।

ওই শহরের ফতেহগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা অমর রাণা বলেন, ‘আমার নামের কারণে আমি মুসলিম নই ভেবে থাকেন অনেকে। একটা বাড়ি দেখানোর সময়েও একই ঘটনা ঘটেছে।’

‘বাড়ির দালাল আমাকে হিন্দু বলে বাড়িটা দেখাচ্ছিল। তাকে জিজ্ঞেস করি- ডিস্টার্বড এরিয়াস অ্যাক্ট এই এলাকায় প্রযোজ্য, আপনি একজন মুসলমানের নামে বাড়ির দলিল তৈরি করবেন তো? উনি কিন্তু সরাসরি না বলে দিয়েছিলেন।’

তবে বরোদাতে যেমন শহরে মোটনাথ রেসিডেন্সি রয়েছে, তেমনই সেখানকার গোরওয়া এলাকায় স্বামী বিবেকানন্দ হাইটসের মতো আবাসনও রয়েছে, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে নজির গড়েছে।

এই আবাসনও সরকারি প্রকল্পের আওতায় তৈরি। আবাসনে ১ হাজার ৫৬০টি ফ্ল্যাট আছে যেখানে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষও বিপুল সংখ্যায় বাস করেন।

সূত্র : বিবিসি

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm