পাঠ্যবইয়ে ব্রা-পেন্টি বিক্রির কিউআরকোড

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। ‘শরীফ-শরীফা’র গল্প নিয়ে বিতর্কের মুখে সেই গল্প বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন অসঙ্গতি। নবম শ্রেনীর জীবন ও জীবিকা বইয়ের একটি অধ্যায়ে মেয়েদের অন্তর্বাস (ব্রা-পেন্টি) বিক্রির ওয়েবসাইটের ঠিকানাযুক্ত একটি কিউআর কোড সংযুক্ত রয়েছে। যা অনেকটাই বিব্রতকর বলে মনে করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।

তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলেছে, পোডাক্টের ডিজিটাল প্রমোশনের অংশ বোঝাতে কিআরকোড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেই কিউআরকোড দেওয়া হয়েছিলো সেটা ছিলো স্পোর্টস আইটেম বিক্রির দোকান। কিন্তু সম্প্রতি সেটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, নবম শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ের ৩৮ নম্বর পাতায় ‘ধাপ-৬: ব্যবসার ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং বা বিপণন পরিকল্পনা’ নামক অধ্যায়ে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রার জন্য কীভাবে ব্যবসায় শুরু করতে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই পাতার ‘চিত্র ২.১: বিভিন্ন মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপনের নমুনা’র চিত্র তুলে ধরে সেখানে নিত্যদিন স্টোরের একটি ছবি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল প্লাস, ভাইবার, লিংকডইন এবং পিনটারেস্টের লোগো দেওয়া হয়েছে। এই লোগো এবং নিত্যদিন স্টোরের মাঝখানে একটি কিউআর কোড সংযুক্ত করা হয়েছে যেটা স্ক্যান করলে (Trucss.com.br) ট্রাক্স ডট কম ডট বিআর নামক ওয়েবসাইট চলে আসে। এটি পর্তুগিজ একটি নারীদের ব্রা-পেন্টি বিক্রির ওয়েবসাইট। যেখানে নারীদের ব্রা-পেন্টি পরে বিজ্ঞাপনের মডেল হতে দেয়া যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে এই ওয়েবসাইট পর্তুগিজ নারীদের অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইট বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অনলাইনে এই নামে বিজ্ঞাপনের শেষ নেই।

নবম শ্রেনীর জীবন ও জীবিকা বইটি রচনা ও সম্পাদনা করেছেন মো. মুরশীদ আকতার, মোসাম্মৎ খাদিজা ইয়াসমিন, হাসান তারেক খাঁন, মোহাম্মদ কবীর হোসেন, মো. সিফাতুল ইসলাম, মো. রুহুল আমিন, মো. তৌহিদুর রহমান, মো. মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আবুল খায়ের ভূঁঞা।

এখন অনেকের প্রশ্ন, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বইয়ে এ ধরনের এডাল্ট ছবিসহ অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইট কেন দেওয়া হয়েছে? এই অন্তর্বাস দিয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কী করবে?

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, কোমল বাচ্চাদের শিক্ষার নামে ভিন্নপথে চালিত করার জন্যই কিছু মহল ইচ্ছাকৃতভাবে এইসব বাজে বিষয়গুলো পাঠ্যবইয়ে সংযোজন করেছেন। কারণ সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্প পড়ে কী শিখবে? আর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই বা অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিয়ে কী করবে? দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়; অনেকটা সুকৌশলে এই বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘ডিজিটালি কিভাবে প্রোমোশন করতে হয় সেটা বোঝাতে কিআরকোডের ছবি যুক্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু আমরা যখন ওই কিউআরকোডটি নিয়েছিলাম, সেটা ছিলো তখন স্পোর্টস আইটেম বিশেষ করে জার্সির দোকান। কিন্তু তারা এখন রিসেন্টলি ব্যবসা চেঞ্জ করেছে। এখন আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছি। আগামী বছরের বইতে এই কিআরকোড বাদ দেওয়া হবে। আর এ বছরও এটা নিয়ে কি করা যায় সেটা আমরা ভাবছি।’

এদিকে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের আলোচিত শরীফার গল্পে পরিবর্তন আনতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘এ বছর যাতে এ গল্পটি না পড়ানো হয় আমরা সে ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সকল স্কুলকে জানিয়ে দেবো। আর আগামী বছর এই গল্পে পরিবর্তন এনে হিজরা জনগোষ্ঠীর জীবন নিয়ে অন্য গল্প সংযুক্ত করা হবে। তবে আমাদের মূল যে লার্নিং তা বাদ যাবে না।’

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm