কেউ দুর্নীতি করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট একটা নির্দেশনা যেতে হবে একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত, কেউ দুর্নীতি করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। যে লক্ষ্য আমরা নিয়েছি তা পূরণ করতে পারব; তার জন্য প্রয়োজন সুশাসন, তার জন্য দরকার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, ‘আমরা বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা এতো বেশি বৃদ্ধি করে দিয়েছি- সেই ক্ষেত্রে আমি তো মনে করি, আমাদের দুর্নীতির কোনো প্রয়োজনই নেই, যা প্রয়োজন এর সব তো আমরা মেটাচ্ছি, তাহলে দুর্নীতি কেন হবে? কাজেই এখানে মানুষের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা দিয়েছি। তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমি জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা দিয়েছি।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সরকার পরিচালনার মূল জায়গাটায় হলো আপনাদের এই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অনেক বিশাল এক কর্মযজ্ঞ এখানে। সেক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক অনেক বেশি। রাষ্ট্র পরিচালনার হার্ট জনপ্রশাসন। আপনাদের সেভাবে কাজ করতে হবে, আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন।’
পদোন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, এখানে দক্ষতাটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কে কত বেশি কাজ করতে পারে, সততার সাথে কাজ করতে পারবে এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলবে- সব কিছু বিবেচনা করে পদোন্নতি হওয়া উচিত।’
পদ ফাঁকা পেলেই পদায়ন নয়- মন্তব্য করে যার যে বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ রয়েছে তাকে সেই জায়গায় পদায়ন করারও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
সবক্ষেত্রে ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতে পারে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় বাংলাদেশে দরপত্রের বাক্স ছিনতাই হতো। আমরা ই-টেন্ডারে চলে গেলাম। এখন আর টেন্ডার বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা শোনা যায় না। এভাবেই আমি মনে করি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা অনেকটা নিশ্চিত করা যায়, আমরা সেটাও করব।’
‘২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হলেও এটা ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, প্রবৃদ্ধি এই পাঁচ বছরের মধ্যে যেন ১০ ভাগে তুলতে পারি’ -বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলব, আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি সেটা আমরা করতে পারব। এজন্য দরকার সুশাসন, দরকার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা। আমরা সরকারি কর্মচারী আইন পাস করেছি ২০১৮ সালে। এখন এ আইনটা কার্যকর হবে। কার্যকর করার সময় অনুশীলন করতে থাকব। এ সময় এর সমস্যাটা চোখে পড়তে পারে। তখন প্রয়োজন মতো এটা সংশোধনও করা যাবে।’
এ সময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
দশম জাতীয় সংসদের মতো এবারও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পরিদর্শন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে সেই কার্যক্রম শুরু করলেন তিনি। কাজে গতিশীলতা আনতে ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অন্যদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) পেয়েছে মাত্র আটটি আসন।
পরে ৭ জানুয়ারি ৪৬ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী রয়েছেন।