জীবনের গল্প থেকেই তো সিনেমা হয়। তাই বলিউড তারকা কারিনা কাপুর আর অক্ষয় কুমারের ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা গুডনিউজের কাহিনীই অনেকটা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়েছে এই দুই মায়ের জীবনে।
আজকাল আইভিএফ বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন অনেক নিঃসন্তান দম্পতির জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছে। বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মা-বাবা হচ্ছেন অনেক দম্পতি। তবে সহজ এই পদ্ধতিই কাল হয়েছে এই দুই দম্পতির ক্ষেত্রে।
মঙ্গলবার সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইভিএফ পদ্ধতি সন্তান জন্ম দিতে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিকের দারস্থ হয়েছিলেন দুই দম্পতি। কিন্তু ক্লিনিকের ভুলে তাদের ভ্রুণ অদলবদল হয়। এ জন্য পরস্পরের সন্তান জন্ম দেন ওই দুই দম্পতি। তিন মাস পরস্পরের নবজাতককে বড়ও করেন তারা। এরপর তারা ভ্রুণ বদলের বিষয়টি বুঝতে পারেন।
বিষয়টি বুঝতে পারার পর ওই ফার্টিলিটি ক্লিনিকের নামে রীতিমতো মামলা ঠুকে দিয়েছেন সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার এক দম্পতি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বাসিন্দা ড্যাফনা এবং আলেকজান্ডার কার্ডিনাল ২০১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া সেন্টার ফর রিপ্রোডাক্টিভ হেলথে যান। সেখানে ড. এলিরান মোরের তত্ত্বাবধানে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশানের মাধ্যমে সন্তানসম্ভবা হন ড্যাফনা।
নির্দিষ্ট সময় পর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ড্যাফনা। কিন্তু সন্তান জন্মের কিছুদিন পর ড্যাফনা এবং আলেকজান্ডারের সন্দেহ হয় শিশুটি তাদের নয়। কারণ শিশুটির গায়ের রং বেশ কালো। শিশুটির চেহারার আদলের সঙ্গেও তাদের মিল ছিল না।
ড্যাফনা এবং আলেকজান্ডার দু’জনই খুব ফর্সা। তাদের চুল ব্লন্ড ও ব্রাউনের মাঝামাঝি। কিন্তু তাদের জন্ম দেওয়া সন্তানের চুল ছিল কুচকুচে কালো। গায়ের রঙ কিছুটা কম ফর্সা। এর থেকেই সন্দেহ হয় তাদের।
ওই দম্পতি ডিএনএ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেন। আট সপ্তাহ পর ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। সেখানে দেখা যায় ড্যাফনার জন্ম দেওয়া শিশুটি তাদের নয়।
এরপরই তারা বুঝতে পারেন ক্লিনিকেই অন্য কোনো দম্পতির ভ্রুণ স্থাপন করা হয়েছিল ড্যাফনার গর্ভে।
এদিকে, ড্যাফনা ও অ্যালেকজান্ডারের ভ্রুণ অন্য এক দম্পতিকে দিয়েছিল ওই ক্লিনিক।
মামলায় বলা হয়েছে, ডাফনা এবং আলেকজান্ডার তিন মাস পর্যন্ত তাদের কন্যার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেনই না।
পুরো ব্যাপারটা প্রকাশিত হওয়ার প্রায় এক মাস পর আসল সন্তানকে বাড়ি আনেন ড্যাফনা ও অ্যালেকজান্ডার।
এদিকে তিন মাস ধরে তারা অন্যের সন্তানকে বড় করছিলেন। সেই নবজাতককে তুলে দেন আসল বাবা-মায়ের হাতে। তবে খুব স্বাভাবিকভাবে দুই পরিবারেরই শিশু দুটির উপর মায়া পড়ে গিয়েছিল।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, এভাবে কোনো সন্তান কিছুদিন বড় করা, তাকে ভালবাসা, স্তন্যপান করোনোর পর অদলবদল করা যে চরম মানসিক আঘাত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০১৯ সালে ৩১ ডিসেম্বর ওই দুই দম্পতি বাচ্চাদের নিয়ে একে অপরের সঙ্গে দেখা করেন। এর দুই সপ্তাহ পর শিশুদের অদলবদল করেন তারা।