কূটনীতির আশ্রয় নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। তাতে রয়েছে-আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশাল বিনিয়োগ করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এমিরেটসের একটি সূত্র প্রকাশ করেছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা তেল শোধনাগারে বিলিয়ন বিলিয়ন বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মামলাটি প্রত্যাহার করতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে রাজি করাতে চেয়েছিলেন।
সূত্র অনুসারে, আমিরাতের কর্মকর্তারা দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনসহ দক্ষিণ আফ্রিকাকে গোপনে বিভিন্ন প্রলোভন দেওয়ার জন্য সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে আমিরাতের একমাত্র অনুরোধ ছিল- ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার বা অন্ততপক্ষে বিচার আদালতে ফাইলে অন্তর্ভুক্ত গণহত্যার অভিযোগের তীব্রতা কমানো। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মামলা দায়ের করার পরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাটি অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তারা আমিরাতের প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে।
সূত্র জানাচ্ছে, এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পরে চরম হতাশায় ভুগছে আবুধাবি। টানা পঞ্চম মাসের জন্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা স্ট্রিপের সাথে চলমান বিরোধের মধ্যে ইসরাইলের প্রাথমিক মিত্র হিসাবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে যুক্ত মিডিয়া আউটলেট এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে বদনাম করার জন্য ইসরাইলকে সমর্থন করে একটি উল্লেখযোগ্য প্রচারণা শুরু করেছে।
সমান্তরালভাবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত তার আঞ্চলিক সম্পর্কের সদ্ব্যবহার করেছে যাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে সিরিয়ায় অন্য কোনো ক্ষেত্র তৈরি না হয়। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এবং ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ বা ইসরাইলের উপর সিরিয়ার ভূখণ্ড থেকে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়ার বিরুদ্ধে সিরিয়ার সরকারকে সতর্ক করেছে আমিরাত।
Axios-এর মতে, এই অঞ্চলের অন্যান্য অনেক আরব দেশকে ছাপিয়ে আমিরাত সিরিয়ার সরকারের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট আসাদের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য আবুধাবির প্রাথমিক পদক্ষেপের কারণে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ এর অংশ হিসাবে ২০২০ সালে দু’পক্ষ একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করার পরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে। আমেরিকান ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে যে, আমিরাতের কর্মকর্তারা সিরিয়ার সিনিয়র সমকক্ষদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন যাতে তারা সংঘাতে জড়িয়ে না পড়েন।
সাইট অনুসারে, আমিরাতিরা সিরিয়ানদের সাথে তাদের যোগাযোগের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে অবহিত করেছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজা স্ট্রিপের কাছে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের শহর ও গ্রামে হামাসের শুরু করা ‘আল-আকসা’ অভিযানকে ‘বিপজ্জনক’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
একটি বিবৃতিতে, মন্ত্রক বন্দী হিসাবে ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের তাদের বাসস্থান থেকে অপহরণ করার রিপোর্ট সম্পর্কে তার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি সহিংসতার কারণে উভয় পক্ষের প্রাণহানির জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করে, মন্ত্রণালয় উভয় পক্ষকে উত্তেজনা বন্ধ করতে এবং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ এই যুদ্ধ আরো মর্মান্তিক ফলাফলের দিকে যেতে পারে।
এদিকে, ইসরাইলের বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিড ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন, ‘যিনি ইসরায়েলের প্রতি তার সংহতি প্রকাশ করেছেন।’ সরকারি আমিরাতি নিউজ এজেন্সি (ডব্লিউএএম) বলেছে যে, বিন জায়েদ ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন এবং ইসরাইলের বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিডের সাথে এই অঞ্চলের পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্পর্কে ফোনে কথা বলেছেন।
এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি আল-জেউদি তেল আবিব এবং আবুধাবির সম্পর্কের উপর ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কোনও প্রভাব অস্বীকার করেছেন।
জর্জিয়ার সাথে তার দেশের সর্বশেষ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি দুবাই থেকে কথা বলার সময়, আল-জেউদি বলেছিলেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অগ্রাধিকার হচ্ছে বিশ্বের সমস্ত অঞ্চলে বাজার অ্যাক্সেস করা।আমিরাতের মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা বাণিজ্য ও রাজনীতির মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখি’।