বাংলাদেশের জনপ্রত্যাশাকে ভারতের নতুন সরকার মর্যাদা দেবে -প্রত্যাশা মির্জা ফখরুলের

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪

অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাংলাদেশের জনপ্রত্যাশাকে ভারতের নতুন সরকার মর্যাদা দেবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ভারতের নতুন সরকার নিয়ে সাংবাদিকরা আমাদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন। এই সস্পর্কে আমার বলার একটাই, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, নিঃসন্দেহে আমাদের প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ।

আমরা ভারতের নতুন সরকারের কাছে একটাই আশা করব যে, তার দেশে যেভাবে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে এখনো, তাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে, তাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করতে পারে, আমরা এদেশের জনগণ ১৯৭১ সালে সেই লক্ষ্যেই যুদ্ধ করেছিলাম, সেই লক্ষ্যেই এখানে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের প্রত্যাশা ভারতের সরকার, বাংলাদেশের জনগণের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশাকে তারা মর্যাদা দেবেন এবং সেভাবে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন। অভিন্ন নদীর হিৎসা আদায়, তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি না হওয়া এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতারও সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘আধুনিক কৃষি, অভিন্ন নদীর পানি আগ্রাসন এবং জলবায়ু ভারসাম্যহীনতা রোধে শহীদ জিয়ার ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক শাহাদত হোসেন বিপ্লব।

বর্তমান আওয়ামী লীগ আজিজ-বেনজীরের আওয়ামী লীগ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, রোববার একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। নাম বলব না আপনারা অনেকে চিনবেন। সে এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। সে এক সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিল, পরবর্তিকালে আওয়ামী লীগও করেছে, এমপিও হয়েছে। এখন প্রায় ১০-১২ বছর ধরে আর রাজনীতির কাছাকাছি নেই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি রাজনীতি করছো না কেনো? সে বলেছে, কোন রাজনীতি করব? আমি বললাম, আওয়ামী লীগ করবা। সে বললো, আওয়ামী লীগ কি আওয়ামী লীগ আছে? এটা তো এখন আজিজ আর বেনজীরের আওয়ামী লীগ। এই যে, দেখুন একজন আওয়ামী লীগের নেতা তার উপলব্ধিটা, এটাই বাস্তবতা।

তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ নেই। যে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলো, যারা আমাদের সাথে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লড়াই করেছিলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যখনই আসে তখনই তাদের কেমিস্ট্রিতে পরিবর্তন শুরু হয়। সেই পরিবর্তনটা হচ্ছে তারা সর্বগ্রাসী হয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বলেছিলেন ওই সময়ে যে, সবাই পায় সোনার খনি, আমি পাই চোরের খনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এরা (সরকার) পরিকল্পিতভাবে, সচেতনভাবে বাংলাদেশকে একটা নতজানু ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যেটা জিয়াউর রহমান সাহেব রুখে দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের পরে তার সেই অসাধারণ মেধাবী, সততা, যোগ্যতার যে নেতৃত্ব সেই নেতৃত্ব দিয়ে। সেই ব্যর্থ রাষ্ট্রে আবার পরিণত করতে চায়। অনেকে বলবে, এতো উন্নয়ন করছে, মেগা প্রজক্টে করছে, এতো ফ্লাইওভার সব কিছু। কিন্তু সেই সঙ্গে এই ফ্লাইওভার, মেগা প্রজেক্ট থেকে তারা কত মেগা পাচার করেছে, চুরি করেছে। এতে সাধারণ মানুষের, গ্রামের মানুষের কি উপকারটা হয়েছে? এতো উন্নয়ন করেছে যে, ঢাকা শহরে আর লোক থাকতে পারছে না। তারা চলে যাচ্ছে গ্রামে। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য! গ্রামে ফিরে গিয়েও তার কর্মসংস্থান নেই, কাজ পাচ্ছে না। কোথায় কাজ পাবে দেশে তো কোনো কাজ নেই।

তিনি বলেন, আজকে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেবারেই শেষ পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে। বাজেট দিয়েছে, সম্পুর্ণ বাজেটটা হচ্ছে, তাদের লুটপাটের বাজেট।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোথাও কোনো ব্যবসা করতে গেলে তার কোনো সুযোগ পাবেন না। টাকা ছাড়া ঘুষ ছাড়া কেউ কথা বলে না। শিক্ষা ব্যবস্থা দেখুন, কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, ছাত্ররা আবার মাঠে নেমেছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার, ভোটের অধিকার সেই অধিকারটা তারা কেড়ে নিয়েছে। আজকে গোটা পরিবার, দল এবং ব্যক্তিকে নিয়ে একটা পুরোপুরি ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, যে ফ্যাসিবাদে আমরা নির্যাতিত হচ্ছি।

আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে জানিয়ে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য যেমন করে হোক এই দানবকে সরিয়ে ফেলতে হবে। পথ একটাই- জনগণকে সংগঠিত করে আমাদেরকে আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে এবং সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে।

সরকার জলাবায়ু ফান্ড খেয়ে ফেলেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ অবস্থা। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, বাংলাদেশের শতকরা ১৭ ভাগ মানুষ তারা এফেক্টেড হবেন। এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তারা চেষ্টা করছে সবাই মিলে। তার জন্য কিছু ফান্ডও বাংলাদেশকে তারা দিয়েছিলো। সেই ফান্ড তারা (সরকার) খেয়ে ফেলেছে। এদের তো খিদার শেষ নেই। সর্বগ্রাসী ক্ষুধা।
দেশের নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া, বুড়িগঙ্গাসহ দেশের নদ-নদীর দুষণ, বিভিন্ন নদীতে রাসায়নিক বর্জ্য অপসারণ, বিশ্বের অন্যতম দুষিত নগরী ঢাকা শহরকে রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব।

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা নাসির হায়দার, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আনম খলিলুর রহমান, ওবায়দুর রহমান টিপু এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অধ্যাপক জামসেদ আলী রিপন বক্তব্য রাখেন।###

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm