জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাইডেনের দেয়া গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সোমবার পাস হয়েছে। এ প্রস্তাব পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি প্রতিনিধি বলেছেন, তারা গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে এবং হামাস উপকৃত হয় এমন কোনো অর্থহীন আলোচনায় অংশ নেবে না।
গতকাল সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৩১ মে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত তিন ধাপের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি পাস হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্যই এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। শুধু রাশিয়া ভোট দানে বিরত ছিল। সোমবার এ প্রস্তাব পাস হওয়ার পর জাতিসংঘে ইসরাইলের প্রতিনিধি রুট শাপির বেন-নাফতালি বলেন, ‘ইসরাইল এটি নিশ্চিত করতে চায় যে, গাজা ভবিষ্যতে ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না। এ জন্য ইসরাইল আপাতত তার লক্ষ্যগুলো পূরণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ইসরাইলের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে সমূলে ধ্বংস করা। এই লক্ষ্যগুলো পূরণ হলেই যুদ্ধ শেষ হবে। তার আগে নয়।’
বেন নাফতালি আরও বলেন, ‘ইসরাইল তার নীতির ওপর অটল রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সকল জিম্মি উদ্ধার না হবে এবং হামাসের সামরিক ক্ষমতা বিলুপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে এটিই আমাদের লক্ষ্য ছিল।’ ইসরাইল আর কখনোই হামাসকে পুনর্গঠিত হতে দেবে না উল্লেখ করে ইসরাইলের এই প্রতিনিধি বলেন, ‘গাজা যাতে ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে, সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে চাই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, হামাস উপকৃত হয় এমন কোনো অর্থহীন ও অন্তহীন আলোচনায় ইসরাইল অংশ নেবে না।’ তবে এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে ব্যাপারে তারা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক।
হামাসের সঙ্গে একতরফা চুক্তির কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনা ব্যর্থ হলে ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধাদের সাথে গাজায় আটক পাঁচজন আমেরিকান জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার জন্য একতরফা চুক্তি করার কথা বিবেচনা করেছে, সোমবার এনবিসি নিউজ জানিয়েছে। দুই বর্তমান এবং দুই সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিনিময়ে হামাসকে কী প্রস্তাব দিতে পারে তা স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, হামাস পাঁচ আমেরিকানকে আটকে রেখেছে, যাদেরকে ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলার সময় জিম্মি করা হয়েছিল। এনবিসি জানিয়েছে, কর্মকর্তারা সেদিন নিহত আরও তিন আমেরিকানদের লাশ উদ্ধারের আশা করছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, কায়রো ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান জিম্মি সহ সবাইকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার সর্বোত্তম উপায়, সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল এই প্রস্তাবের মাধ্যমে, টেবিলে থাকা যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে। এই মুহূর্তে।’ যে কোনো একতরফা আলোচনা কাতারের আলোচকদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং এতে ইসরাইল জড়িত হবে না, বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে ওয়াশিংটনের সাথে এই জাতীয় চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য হামাসের একটি প্রণোদনা থাকবে কারণ এটি মার্কিন-ইসরাইল সম্পর্ককে আরও টেনে আনবে এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপর চাপ বাড়াবে, যিনি জিম্মিদের বের করার জন্য আরও কিছু না করার জন্য ঘরে-বাইরে সমালোচিত হয়েছেন। প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার সাংবাদিকদের বলেন, জিম্মিদের বের করে আনতে সব দেশেরই যা করা উচিত তাই করা। তিনি বলেন, ‘আমরা সব দেশকে, সব দেশকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের ওপর যতটা সম্ভব চাপ দিতে বলেছি।’ সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স।