প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখ টন গম এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিপুল পরিমাণ এ খাদ্য আমদানিতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় এক হাজার ৫৯১ কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য আমদানির এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান হোছাইনী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর চাল আমদানির জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। পরে যখন দেখা যায় চাল আমদানির জন্য টাকা লাগছে না, তখন এ টাকা অন্য কোনো প্রয়োজনে খরচ করা হয়। আমরা তো আগাম বলতে পারব না আগামীতে কী পরিমাণ ধান উৎপাদন হবে। সেক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, আর গম তো আমদানি করেই চাহিদা মেটানো হয়। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান হোছাইনী বলেন, আগের চেয়ে খাদ্য আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। আবার ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। ফলে আমদানি ব্যয় মোটের ওপর বেড়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে খাদ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেন, সরকারে অগ্রাধিকার হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা। যে কোনো মূল্যে খাদ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। কারণ ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৃথিবীর সবকিছু অর্থহীন। ক্ষুধার কারণে যাতে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে না পারে সে বিষয়ে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক ও সতর্ক। দাম যাই হোক খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে যেন শূন্য হাতে না ফিরে। বাজারে চাল নেই এমনটা যেন না হয়-সরকার সেটা নিশ্চিত করতে চায়। দামের প্রশ্ন ভিন্ন। বিশ্ববাজারে দাম বেশি থাকলে বেশি দামেই আমদানি করতে হবে। কর্মকর্তারা আরও জানান, আগের চেয়ে খাদ্য সংরক্ষণে সরকারের সামর্থ্যও বেড়েছে। আগে যেখানে ১৬-১৭ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত রাখা যেত, এখন সরকারের প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুতের সামর্থ্য হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চাল আমদানির কোনো প্রয়োজন আছে এমনটা মনে হয় না। বরং সরকার চাইলে রপ্তানি করতে পারে। পক্ষান্তরে গম আমদানির জন্য আরও বেশি বরাদ্দ রাখা উচিত। কারণ ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্বময় খাদ্যের জন্য হাহাকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিন যুদ্ধ বিশ্বকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ যুদ্ধ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর মধ্যপ্রাচ্য এখন বিশ্বের বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। যে কোনো সময় আবার বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে ইরান, ইসরাইল, লেবানন, ইয়েমেন এবং মিসর। সেক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা অতীব জরুরি বিষয়। সরকার কর্মচারীদের রেশন হিসাবে চাল ও আটা দেয়। এছাড়া ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস), ন্যায্যমূল্য, ভালনারেবল ওমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) ও ফ্যামিলি কার্ডে চাল-আটা দিচ্ছে। এছাড়া জরুরি ত্রাণ হিসাবেও দেওয়া হয় চাল।