লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন দেশটি কেউ আমাদের উপহার হিসেবে দেয়নি। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।’
‘ভারত পেয়েছে দ্বিখণ্ডিত পাকিস্তান। আমরা উভয়ে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি। সুতরাং হিসাব সমান-সমান। বরং প্রায় লক্ষাধিক পাকিস্তানি সেনা সদস্যের ফেলে যাওয়া সকল অস্ত্র, গোলাবারুদ, যানবাহন ও অন্যান্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার মেশিন ইত্যাদি ভারতের সেনাবাহিনী নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার তখন একটি টু-শব্দ পর্যন্ত করার সাহস পায়নি। প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাস হিসেবে কাজ করে আসছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অপমানজনক,’ বলেন তিনি।
রোববার (৭ জুলাই) রাজধানীর মগবাজারের এলডিপি কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
কর্নেল অলি আহমদ বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারের কোনো এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষর করার সাংবিধানিক অধিকার নেই। কারণ তারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়। তারা ভারতের সাথে যে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে, তাতে দেশের জন্য অনেকগুলো ক্ষতিকর, সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। দেশের ও জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতার বালাই নেই। তাদের কারণে দেশে ন্যায়বিচার নির্বাসিত, মানবাধিকার পদদলিত।’
এলডিপি প্রধান বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে, দলীয় নেতাকর্মী এবং সেবাদাস কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে নির্বিবাদে দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করাসহ অনেকগুলো আইনবহির্ভূত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে। সব সময় বলেন, দেশের উন্নতি করার জন্য আমার ক্ষমতা চাই। কিন্তু বাস্তবতা এবং তাদের আচরণ দুটিই ভিন্ন। শেখ হাসিনা বারবার জাতির সামনে বলেছেন যে আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তা তারা কখনো ভুলতে পারবে না। কয়েকদিন আগে তিনি আরো বলেছেন যে, ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে অবাধে যাতায়াত বিদ্যমান রয়েছে। এতে কি তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে?’
অলি বলেন, ‘তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে নাই। কারণ তারা এক দেশ অন্য দেশের ব্যাপারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। বিশেষ করে, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নির্বাচন, রাজনীতি এবং অর্থনীতির ব্যাপারে তো নয়ই। তাদের নাগরিকদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য ভিসারও প্রয়োজন হয় না। অপরদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কি সেই ধরনের অবস্থা বিরাজ করছে? মোটেও না।’
জ্যেষ্ঠ এ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আমার জানামতে, ভারতের রেলওয়েতে শক্তিশালী গোয়েন্দা ইউনিটসহ প্রায় ৮০ হাজার অস্ত্রধারী সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে ভারতের রেললাইন স্থাপিত হলে, ভারতের রেলওয়ের এই ৮০ হাজার অস্ত্রধারী এবং শক্তিশালী গোয়েন্দাদের বাংলাদেশ কিভাবে সামাল দেবে?’
ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মন্তব্য করে কর্নেল অলি আরো বলেন, ‘বর্তমান ভারত সরকার বাংলাদেশের অবৈধ সরকারকে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে একে একে বিগত ১৫ বছরে একতরফাভাবে তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলিকে সুকৌশলে পঙ্গু করে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার ষড়যন্ত্রে অনেকাংশে তারা সফল হয়েছে।’
বিএনপির সাবেক এ নেতা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমরাও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতাম। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আপনারাও (আওয়ামী লীগ সরকার) ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় হলো, আপনাদের কথা ও কাজের মাঝে কখনো কোনো মিল নেই। আপনারা সব সময় সুযোগের সন্ধানে থাকেন। দেশের ও জনগণের কথা মোটেও আপনাদের মস্তিষ্কের মধ্যে নেই। শুধু চাই হালুয়া-রুটি আর মসনদ। মনে রাখবেন, সামনে চরম দুঃসময় অপেক্ষা করছে। আল্লাহ এবং রাসূলের বাণী সদা সত্য। এখন সময় হয়েছে, সম্মানের সাথে বিদায় নেন।’
কর্নেল অলি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে বলা যায়, অবৈধ সরকারই দুর্নীতি, টাকা পাচার, চোরাচালান ইত্যাদি লালন ও পালনকারী। অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা দখল করার জন্য এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সবসময় পুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ২০১৪, ২০১৮, এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে সমগ্র জাতি এবং সমগ্র পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে, এই অবৈধ সরকারের পাতানো নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। সুতরাং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, এই অবৈধ সরকারকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। অপরদিকে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল-জরিমানা এবং হয়রানি করা হয়। নিঃসন্দেহে বলা যায়, অবৈধ সরকারই দুর্নীতি, টাকা পাচার, চোরাচালান ইত্যাদি লালন ও পালনকারী। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবৈধ সরকারের পক্ষে দুর্নীতি দমন আদৌ কি সম্ভব?’