ঢাবির জরুরি বৈঠকে প্রভোস্ট কমিটির পাঁচ সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর সোমবার বিকেল ৫টায় জরুরি বৈঠকে বসে প্রভোস্ট কমিটি। সভায় এ সব সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামাল।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

সভায় নেয়া পাঁচটি সিদ্ধান্ত হলো

১. শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন।
২. প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
৩. হলগুলোতে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না।
৪. যেকোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান এবং
৫. সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে। কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

সভায় প্রো-ভিসি (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিভিন্ন হল ও হোস্টেলগুলোর প্রভোস্ট ও ওয়ার্ডেনরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে থাকেন। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাবি এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের মধ্যকার সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দফা দফায় চলা ছাত্রলীগের হামলায় এখন পর্যন্ত ২০০’রও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি স্থানে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় পক্ষই থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অংশ নিচ্ছেন।

হামলার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে রড, লাঠি ও হকিস্টিক দেখা যায়।

ঢাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, মারধর ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অন্তত ৯১ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আজ সোমবার বিকেল ৪টার পর থেকে আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসতে থাকেন। বিকেল ৫টা নাগাদ ৯১ জনের চিকিৎসা নেয়ার হিসাব পাওয়া গেছে।

আজ বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে ছাত্রলীগের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর ক্যাম্পাসের কয়েকটি জায়গায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। আন্দোলনকারীরা পিছু হটলে তাদের ধরে ধরে মারধর করা হয়।

আহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ দাবি করেছে যে তাদেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এদিকে, আহত শিক্ষার্থীদের যারা ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেছেন, তাদের সেখান থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে তাদের বের করে দেন।

এরপর ঢাকা মেডিক্যালের সামনের সড়কে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনের সড়কের কিছুক্ষণ পরপর ঘটছে ককটেল বিস্ফোরণ।

উল্লেখ্য, গতকাল চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে প্রথমে রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে আসেন। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভ শেষে হলে ফিরে যান তারা।

একই সময়ে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

একই ইস্যুতে আজ সোমবারও উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দুপুরের দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে এসে অবস্থান নেন কয়েক শ’ আন্দোলনকারী। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন।

এরপর ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয় ছাত্রলীগ।

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm