কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রজ্ঞাপন অনুমোদন করেছিলেন।

‘সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রতিপালন করেছে। রায়ের কিছুই পরিবর্তনের ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা যেভাবে দিয়েছেন আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করেছি। এর বাইরে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায়ও আমাদের নেই,’ এক সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এ সময় তার সাথে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতও উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সাধারণ বা মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।

এর আগে রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে কোটা কেমন হতে পারে তার একটি নির্দেশনা দিয়েছিলো। তবে ওই রায়ে বলা হয়েছিলো যে প্রয়োজন হলে সরকার চাইলে এটিকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা পরিমার্জন করতে পারবে।

গত ৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগ কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র বাতিল করে দিয়েছিলো। এর পরে কোটা সংস্কারের দাবিতে নতুন করে শিক্ষার্থী আন্দোলন গড়ে ওঠে।

এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ব্যাপক সহিংসতায় তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত দেড়শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সরকারি বেসরকারি বহু স্থাপনায়, যার মধ্যে মেট্রো রেলের স্টেশন, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজাও ছিলো।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার রাত থেকে সরকার দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করেছে, যা এখনো বহাল আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আরো যা বলেছেন-

এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আশা করি এখন আর নতুন করে কোন সমস্যা তৈরি করা হবে না এবং পরিস্থিতিরও আর অবনতি হবে না। তবে যদি অবনতির চেষ্টা কোনো অপশক্তি করে সে বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনজীবনে যখন স্বস্তি আসবে তখন সরকার কারফিউ প্রত্যাহার করবে। ‘আপনারা এখন দেখতে পাচ্ছেন যে স্বস্তি যতই ফিরে আসছে ততই কারফিউর মেয়াদ কমিয়ে আনা হচ্ছে।’

আন্দোলনকারীরা নতুন করে দেয়া দাবিগুলো না মানলে আবারো আন্দোলনে ফিরে যাবে বলে যে কথা বলেছে গণমাধ্যমে সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মূলত এটা ছিলো কোটাবিরোধী আন্দোলন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে। আমি আহবান জানাবো যে ছাত্রছাত্রীরা কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছে সংস্কার চেয়ে এখন তাদেরও কর্তব্য আছে। এখন তাদের স্ব স্ব জায়গায় ফিরে পড়াশোনা করা উচিত।’

তিনি বলেন, সরকার ধৈর্য ধরেছে কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ ষড়যন্ত্রমোকাবেলার যথেষ্ট শক্তি সরকারের আছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে নাগাদ খুলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে সচেষ্ট। সেজন্য আপনারা আশা করতে পারেন যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে হক বলেন, সহিংসতার বিষয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

‘সহিংসতা যে হয়েছে এতে সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার দেখভাল করবে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছেন তাদের ব্যাপারে মামলা হওয়ার তথ্য দিলে সেটি আমরা দেখবো। শিক্ষার পরিবেশ ও নিরাপত্তা সরকার তৈরি করবে।’

কোটা বিষয়ে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে তার বর্ণনা দিয়ে আনিসুল হক বলেন, কোটা বিরোধীরা যখন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলো তার সুযোগ নিয়ে কিছু মহল সহিংসতা করেছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

উল্লেখ্য, সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে।
সূত্র : বিবিসি

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm