জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করা উচিত। এ সময় তিনি বাংলাদেশে যা ঘটছে সেসব ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানান।
বুধবার (২৪ জুলাই) জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে এসব কথা বলেন ডুজারিক।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন তুলে বলেন, গত সোমবার বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নামে ‘পরিত্যক্ত রাজনৈতিক দল’ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিল। এ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না।
জবাবে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে যা ঘটছে, আমরা যা দেখেছি—গণগ্রেফতার, হত্যাকাণ্ড—সেসব ব্যাপারে আমরা আমাদের উদ্বেগ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছি।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে পারার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর কর্তৃপক্ষের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি অধিকার, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে নিহিত রয়েছে।’
ডুজারিক বলেন, ‘সহিংসতার সব ঘটনা একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতিতে তদন্ত করা উচিত। দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার, তবে সংলাপের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, তারা সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে, বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ দেখেছেন। যেখানে তরুণেরা বিশ্বের অবস্থা, নিজেদের ভবিষ্যৎ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের সংবেদনশীলতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
‘তবে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো—বিক্ষোভ যেখানেই হোক না কেন, গ্রেফতারের ভয় ছাড়াই, আহত বা আরো খারাপ পরিস্থিতির ভয় ছাড়াই মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অনুমতি দেয়া উচিত,’ বলেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, দেখামাত্র গুলির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে। এতে শিক্ষার্থীরা নিহত হয়েছেন। এ বিষয়টি কি জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকায় প্রভাব ফেলবে?
জবাবে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি গুলি করাসহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে তারা যে খুবই উদ্বিগ্ন, সেকথা ইতোমধ্যে বলা হয়েছে। তারা এই উদ্বেগের কথা প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন। আবার সরাসরি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
ডুজারিক আরো বলেন, শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশ্নে তার বক্তব্য হচ্ছে—জাতিসঙ্ঘে কর্মী নিযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তির মানবাধিকার যাচাইয়ের প্রাথমিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সদস্যরাষ্ট্রের। তারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করবে যে মোতায়েনের জন্য মনোনীত কর্মী অতীতে আন্তর্জাতিক মানবিক বা মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের সাথে জড়িত নন, কিংবা জাতিসঙ্ঘের কোনো অভিযান থেকে ফেরত পাঠানো হয়নি।’
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, তারা স্পষ্টতই এ বিষয়ে দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছেন। তারা নিশ্চিত করতে চান যে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার নীতির প্রয়োজনীয়তা মেনে চলতে তারা সব ব্যবস্থা নিচ্ছেন।