কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ।
সরকার মনে করছে, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ‘পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ’ করেছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে সরকার যে ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ পরিস্থিতি তৈরি করেছে এর কোনো প্রভাব নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ওপর এর ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়তে পারে।
তারা মনে করছেন, বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে তা মনে হচ্ছে।
কারণ, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হাতে এখন যেসব ‘প্রমাণ’ আছে, তা দিয়ে তারা ‘খুব সহজেই নীতি-নির্ধারকদের ওপর বিভিন্নরকম চাপ প্রয়োগ’ করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করে। একইভাবে ঢাকায় ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি এই উদ্বেগের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক গত ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটছে, যে গণগ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। সব সহিংস কর্মকাণ্ডের তদন্ত স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে হওয়া উচিত। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত, যা হবে সংলাপের উপযোগী।’
এদিকে, বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরি ভিত্তিতে প্রকাশ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসহ সব মানুষকে মুক্তভাবে যোগাযোগের জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে পূর্ণ ইন্টারনেট সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি ও মান নিশ্চিত করতে বলা হয়।
ওইদিনই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ছয় দিনের যোগাযোগ বিধিনিষেধের মধ্যেও কর্তৃপক্ষ ‘বেআইনিভাবে বল প্রয়োগ অব্যাহত’ রেখেছে।
সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া তিনটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রাণঘাতী ও মৃদু প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর ডেপ্রোজ মুচেনা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা ভিডিও এবং ছবির ক্রমাগত যাচাই ও বিশ্লেষণে সেখানকার এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের ভয়াবহ মানবাধিকার রেকর্ড এবং বিক্ষোভ দমনে মোতায়েন করা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকাণ্ডে আশ্বস্ত হওয়া যায় না যে ইন্টারনেট বন্ধ করে (যেটি এখনো আংশিক বহাল আছে) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অনুপস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।’
জাতিসঙ্ঘ ও অ্যামনেস্টি বিবৃতি দেয়ার আগেই বিবৃতি দেয় নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
গত ২২ জুলাই সোমবারের সেই বিবৃতিতে সংস্থাটির ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতাকারী যে কারো ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঢালাওভাবে নিপীড়ন চালানোর ঘটনা বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে। এবং, এবারো আমরা সেই একই ধারাবাহিকতা দেখছি, যা প্রয়োগ করা হয়েছে নিরস্ত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর।’
‘প্রভাবশালী সরকারগুলোর এখন সময় হয়েছে, শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ করার। যাতে তিনি শিক্ষার্থী ও অন্যান্য আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করেন।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যারা বিবৃতি দিয়েছে, তারা সবগুলোই বিশ্বাসযোগ্য।’
তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এসব বিবৃতির ফলে একটা ‘নেতিবাচক’ চাপ যে তৈরি হবে, তা বলাই বাহুল্য। এখন সরকার সেটিকে কিভাবে সামাল দিবে, সেটাই দেখার বিষয়।
দেশগুলোর অবস্থান
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাম্প্রতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য সবাইকে সংযত আচরণের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গত ২৪ জুলাই বুধবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি স্পষ্ট করে জানান দিয়েছি।’
ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশন গত ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে গত সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ে বাংলাদেশের মানুষ যে ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে, তারা দেখে তারা স্তম্ভিত।
‘এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর জন্য যারা দায়ী এবং এসব ঘটনায় যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, সবাইকে যেন যথাযথা প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়ে বিচার হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিবৃতিতে অবিলম্বে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত করার কথাও বলা হয় কানাডিয়ান হাইকমিশনের বিবৃতিতে।
গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীন সব সময়ই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চায়।
বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলন ইস্যুতে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণেরই নিজেদের এই সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা আছে।
ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলে না।’
এদিকে, গত ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র রান্ধীর জয়সওয়াল কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে বলেন, তারা আশাবাদী যে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি খুব শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
প্রভাব কী হতে পারে?
বাংলাদেশ ইস্যুতে চীন ও ভারতের অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলোর মতো নয়। বাংলাদেশে চলমান এই অস্থিরতাকে ঘিরে চীন ও ভারত ‘অভিন্ন’ সুরে কথা বলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, তাদের এই অভিন্ন অবস্থান ‘খুব বিস্ময়কর’ নয়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হাতে যেসব তথ্যাদি আছে, সেগুলো দিয়ে তারা চাপ সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশ সরকার তা আমলে নিবে না বলে তার ধারণা।
‘আন্তর্জাতিকভাবে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থনকে তারা যথেষ্ট বলে মনে করে। সেই কারণেই তাদের পক্ষে এ ধরনের একটা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতায় টিকের থাকার কথা বিবেচনা করা সম্ভব,’ বলেন তিনি।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘পশ্চিমের সাথে তার (শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ) দূরত্বের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় রকমের উপাদান হিসেবে কাজ করবে। তারা কোন ধরনের অবস্থান নেবে, তা আমরা দেখবো।’
‘বাংলাদেশের নীতিনির্ধাকরদের ওপর চাপ তৈরি হবে। আজকে বা এই সপ্তাহের মাঝেই হবে, তা বলছি না। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রভাব প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবো বলে আমার ধারণা।’
যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন যে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশে চলমান এই আন্দোলন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চললেও সেটা নিয়ে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বাংলাদেশের উচিৎ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জোর দেয়া।
‘সরকার বলছে, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের মাঝে জঙ্গি ঢুকে পড়েছিল। কোটা আন্দোলনের মাঝে তারা ঢুকেছে, সেটা যদি সরকার প্রমাণ করে দেখাতে পারে, তাহলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে এই সমালোচনা থাকবে না…বাংলাদেশের ভেতরের মানুষও বুঝতে পারবে,” বলেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীরও মনে করেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ বাড়তে থাকলে চাপ হবে।’
গত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকার পরও পশ্চিমারা এনিয়ে খুব বেশি আলোচনা করেনি। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপটকে ‘ভিন্ন’ হিসেবে বর্ণনা করছেন হুমায়ূন কবীর।
‘শুরুতে এটি ছিল ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলন। পরে এটিকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকে গেছে।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি শুরুতেই মোকাবেলা করতে পারতো সরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সামিয়া জামান বিবিসিকে বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো যে বল প্রয়োগ করেছে, তা দরকার ছিল না। সরকার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় এই অবস্থা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
‘এর পেছেন সরকারের দায় আছে। তারা তা এড়াতে পারে না। রায় ঘোষণা আরো আগে করা যেত। রায়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করায় অন্যান্য গোষ্ঠী এখানে আসার সুযোগ পেয়েছে।’
তবে চীন-ভারতের সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানের ফারাক সম্পর্কে তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘আমরা দুইটা ভাগে নিজেদেরকে ভাগ করে ফেলেছি। সব দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে এসেছি… এই ইস্যুতে আশেপাশের দেশগুলো যে অবস্থান নিচ্ছে, সেখানে তাদের স্বার্থ জড়িত।’
এক নজরে ঘটনাপ্রবাহ
গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। ফলে, পুনরায় কোটা ব্যবস্থা বহাল হয়।
এরপরই শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শুরু করে। কিন্তু দেশজুড়ে প্রতিবাদ জোরালো হতে শুরু করে গত ৩০ জুন থেকে। গত এক সপ্তাহে তা প্রকট হয়ে ওঠে।
এই সময়ের মাঝে সারা দেশে অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এই হতাহতদের মাঝে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ সবাই আছেন।
প্রাণহানির পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় দেশের সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ আনতে শুরুতে পুলিশ, তারপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সবশেষে সামরিক বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, দেশব্যাপী মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়ার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ পর্যন্ত জারি করা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রভাবে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পূর্বনির্ধারিত স্পেন ও ব্রাজিল সফর বাতিল করেছেন এবং পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ পর্যন্ত দিয়েছিলেন। তারপরও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
সূত্র : বিবিসি