আ’লীগ সরকারের আমলের চুক্তিভিত্তিক সব কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া সব ধরনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রশাসনের সব স্তরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা লাভবান হয়েছেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদের সরানোর জন্য আন্দোলন জোরালো হচ্ছে।

বুধবার (৭ আগস্ট) ফোনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব সামসুস সাদাত সেলিম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে। এখন যেহেতু ঐভাবে সরকার কার্যকর নয়, তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তখন একসাথে সবগুলো বাতিলের আদেশ জারি করা হবে।

প্রশাসনের শীষ সূত্র জানিয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতেই দেশের আইনশৃঙ্খলার সাথে সরাসরি জড়িত পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পদটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে।

যেসব কর্মকর্তারা চুক্তিতে আছেন তারা ‘আওয়ামী লীগ সরকার ঘরানা’ বলে পরিচিত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। এ বছরের জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠনের পর প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা কর্মকর্তারা অপরিহার্য না হলেও আস্থাভাজন হওয়ার কারণে মেয়াদ শেষে তাদের চুক্তিতে রেখে দেয়া হয়। সে সময় থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের যেন হিড়িক পড়েছিল। ভোটের পর অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা চুক্তিতে নিয়োগ পান।

সরকার আবার ক্ষমতায় আসার কৃতজ্ঞতা হিসেবে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। সচিবালয়ে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়ার পর অনেকের স্বপ্ন থাকে একদিন সচিব হবেন, বড় মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাবেন। কিন্তু বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে অনেকে সে স্বপ্নপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি কাম্য নয়।

তিনি আরো জানান, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মানেই একজন কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা। একটি পদ খালি হওয়ার পর আরেকজন কর্মকর্তা সেই পদে বসবেন, এটাই নিয়ম। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে ওই পদে আগের কর্মকর্তাই থেকে যাচ্ছেন। ফলে নতুন করে যার দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তিনি কিন্তু বঞ্চিত হলেন। একসময় দেখা গেল, তার নিজেরই চাকরির মেয়াদ শেষ। ফলে মনঃকষ্ট নিয়ে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে।

ইতোমধ্যে সরকারের পতন হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চুক্তি বাতিল করা হয়। এরপর বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো: তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

বর্তমানে প্রশাসনে সচিব, জ্যেষ্ঠ সচিব বা সমমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োজিত রয়েছেন ১৯ জন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (জ্যেষ্ঠ সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (জ্যেষ্ঠ সচিব) আহমেদ মনিরুছ সালেহীন, পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সত্যজিত কর্মকার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোকাম্মেল হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারসহ আরো বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা রয়েছেন।

এছাড়া জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো: ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো: ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো: হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো: খাইরুল ইসলাম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আলী হোসেন চুক্তিভিত্তিতে কর্মরত রয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের’ নির্বাহী কমিটির প্রধান পরামর্শক পদে নিয়োগ দেয়া হয়। গত ৫ জুলাই সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চুক্তিতে চাকরির মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়।

এদিকে আগামী অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করলে তিনি অক্টোবর পর্যন্ত সময় পাবেন না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও আর দায়িত্বে থাকতে পারছেন না।

সূত্র : ইউএনবি

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm