সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এখন পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চলছে তার। সালমান এফ রহমানের সঙ্গী সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তবে সালমান এফ রহমান ছোটবেলা থেকে পাকিস্তানে বেড়ে ওঠায় বাংলা পড়তে না পারায় সঙ্গী আনিসুল হক তাকে অভিযোগ পড়ে শুনিয়েছেন। ওই সময় সালমান এফ রহমান মন্তব্য করেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
শুক্রবার ছিল সালমান ও আনিসুলের রিমান্ডের তৃতীয় দিন। তাদের ইন্ধনে দোকান কর্মচারী শাহজাহান আলীকে হত্যা করা হয়েছে-এমন অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও সার্বিক বিষয় নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গ্রেফতার সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কারসাজিসহ কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ‘দরবেশ’ হিসাবে বহুল পরিচিত সালমান এফ রহমানের শেয়ারবাজার কারসাজিতে নিঃস্ব হয়ে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নেন। এসব বিষয় নিয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ওঠা আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্রজনতাকে হত্যার নীল নকশার পেছনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারা কারা জড়িত ছিল সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হচ্ছে সালমান ও আনিসুলকে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দিনভর ডিবির শীর্ষ কর্তারা, নিউমার্কেট থানার ওসি ও হত্যা মামলার আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) ডিবি কার্যালয়ে সালমান ও আনিসুলকে জিজ্ঞাসবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, কোর্টে সাবমিট করার জন্য যে কাগজপত্র বা অর্ডার শিট তার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল সেগুলো বাংলায় লেখা ছিল। এ সময় সালমান জানান, তার বাবা পাকিস্তানে ব্যবসা করায় ছোটবেলাতে সেখানে ছিলেন। এ কারণে তিনি বাংলা পড়তে পারেন না। তখন সাবেক আইনমন্ত্রী পড়ে শোনান। পরে সালমান এফ রহমান কোর্টে সাবমিট করার কাগজে স্বাক্ষর করেন। শাহজাহান হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। কখন মার্ডার হয়েছে, কারা নির্দেশ দিয়েছে এসব বিষয়ে কোনো কিছু জানি না।’ সালমান এফ রহমান তার কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত না বলে জানান জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বাভাবিক ও স্থির ছিলেন তিনি।
গ্রেফতার সালমান ও আনিসুলকে ডিবির তত্ত্বাবধানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মহা. আশরাফুজ্জামান। তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। যদি কিছু থাকে-আমার যেটা বলার আপনাদের আমি দাওয়াত দিয়ে বলব।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই রাজধানীর নিউমার্কেট থানাধীন টিটি কলেজের বিপরীত পাশে কাদের আর্কেড মার্কেটের সামনে সংঘর্ষে গুরুতর জখম হন ওই এলাকার একটি পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলী। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ডিএমপির নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নৌপথে পালানোর সময় মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরদিন বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তারা বর্তমানে ডিবি হেফাজতে আছেন। তবে হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘হত্যা মামলাটি এখনো আমরা তদন্ত করছি। থানা এখনো ভালনারেবল হওয়ায় আসামিদের ডিবিতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
সূত্র আরও জানায়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জিজ্ঞাসাবাদে একেবারেই স্বাভাবিক ছিলেন। তিনি পুলিশের কোনো প্রশ্নের উত্তরই দেননি। প্রশ্ন করা হলে শুধু হাসেন। নিউমার্কেট থানায় হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে শুনে মুচকি হেসেছেন তিনি। এ সময় তিনি পুলিশের কাছে সুপ্রিমকোর্টের বর্তমান অবস্থা ও বিচারক কাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এসব বিষয়ে জানতে চান। তাকে বিস্তারিত জানান তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
তাদের খাবারের বিষয়ে জানা গেছে, ডিবি অফিসে যে খাবার রয়েছে সেগুলোই খাচ্ছেন তারা। চিকেন জাতীয় খাবার পছন্দ করেন সালমান। তিনি শুক্রবার মুরগি ও ডিম দিয়ে খেয়েছেন। আর সাবেক আইনমন্ত্রী পছন্দ করেন মাছ। তিনি ডিম ও শিং মাছের ঝোল দিয়ে খেয়েছেন। এছাড়া ডিবির হাজতখানার ফ্লোরে ঘুমাচ্ছেন দুজনই। কিভাবে তাদের সময় কাটছে জানতে চাইলে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বসে থাকেন, ঘুমান, খান এবং নামাজ পড়ে সময় কাটান তারা।