শেভরনের কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়া ২৬০ মিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪

গত পাঁচ মাসে বিবিয়ানা ও অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্র থেকে কেনা গ্যাসের দাম বাবদ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছে ২৬০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে শেভরন বাংলাদেশের।

চলতি সপ্তাহে একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিটির বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক গ্যাস কিনে পেট্রোবাংলা। নগদ অর্থ সংকটের কারণে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শেভরন বর্তমানে দৈনিক প্রায় ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহ করে; যা দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের প্রায় ৫০ শতাংশ। দেশে ২৬১২ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন হয়।

এর মধ্যে দেশের বৃহত্তম ক্ষেত্র বিবিয়ানা থেকে ১০১৭ এমএমসিএফডি গ্যাস, জালালাবাদ ১৫৩.৪ এমএমসিএফডি এবং মৌলভীবাজারে ১৬.৪ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবনতির কারণে এই প্রথম বিদেশী তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করতে চাপের মুখে পড়েছে দেশ।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারাও একই মত পোষণ করেন।

তারা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২ সালে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। তবে ২০২৩ সালে ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসার পর পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ও এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে চাপ পড়েছে।

এর ফলে গত বছর কিছু সময়ের জন্য সরকার এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়। একই সঙ্গে দেশী-বিদেশী সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধও কমাতে হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ কারণে শেভরনসহ অন্যান্য কোম্পানির পাওনা রয়েছে।’

বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে শেভরন বুধবার (২১ আগস্ট) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দীর্ঘদিনের কোম্পানির নীতি হিসেবে আমরা বাণিজ্যিক কারণে আমাদের বকেয়া পাওনার হিসাব দিই না।’

এতে আরো বলা হয়, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলার সাথে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে শেভরন বাংলাদেশ। প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে শেভরন।

এতে আরো বলা হয়, ‘দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এটি তার জনগণের জন্য যে সুবিধা দিতে পারে তা নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত।’

এদিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত বিদেশী কোম্পানিগুলো থেকে পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ও গ্যাস আমদানি ও ক্রয় অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়িয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, বিদেশী গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরো বৈদেশিক মুদ্রা সহায়তা পাচ্ছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

মঙ্গলবার জ্বালানি সচিব নুরুল আলম বলেছেন, ‘আগে আমরা বিদেশি কোম্পানিকে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম বিল পরিশোধ করার জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার পেতাম। এখন আমরা এর চেয়ে বেশি পাচ্ছি।’

সম্প্রতি বিদেশী গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছে সরকারের বকেয়া বিল ৫০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সচিব এই মন্তব্য করেন।

শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশী সংস্থাগুলোর বকেয়া পাওনা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।

অন্যথায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় তাদের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে।

তারা বলেন, দেশের সমুদ্রসীমায় হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক অফশোর দরপত্র আহ্বানের আগে অর্থপ্রদান পরিস্থিতির উন্নতি করা প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই খাতসংশ্লিষ্ট একজন বলেন,‘পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে বিদেশী কোম্পানিগুলো নিলামে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হতে পারে।’

সূত্র : ইউএনবি

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm