চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকরা। এ সময় তারা আদালতের কেন্দ্রীয় মসজিদে হামলা চালিয়ে মসজিদের জানালার কাচ, আসবাবপত্র এবং আইনজীবীদের তিনটি প্রাইভেটকার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে উগ্র সংঠনটির সদস্যরা।এমনকি আদালতের নিচতলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা সাইফুল ইসলাম আলিফ (৩৫) নামে এক আইনজীবীকে পাশের জঙ্গল সিনেমা লেনে নিয়ে গিয়ে মারধরের পর কুপিয়ে হত্যা করে
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার পর থেকে এ হামলা চালায় চিন্ময় সমর্থকরা। বিকেল ৫টার সময়ও হামলা-ভাঙচুর চলছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালত চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন নামঞ্জুর করার সাথে সাথে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। ভাংচুর চালানো হয় নির্বিচারে। মসজিদে হামলা করা হয় এবং নিরীহ মুসল্লিদের আহত করা হয়। সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে মুসলমানদের উদ্দেশ করে গালিগালাজ এবং হামলার জন্য তার্গেট করা হয়। পাশাপাশি তারা প্রিজনভ্যান আটকে চিন্ময় কৃষ্ণকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করে। এ সময় তারা ‘জয় শ্রীরাম’, ‘দালালের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘জেলের তালা ভাংব, চিন্ময় প্রভূকে আনবো’, ‘কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ এসব স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের পরিকল্পিত উস্কানিমূলক তৎপরতার মাঝেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল একেবারেই শান্ত। তাদের বুঝিয়ে সরে যেতে বলে। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মৃদু লাঠিপেটা করে এবং গ্যাস গান ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ বিষয়ে নগরের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহন করা প্রিজনভ্যান আদালত প্রাঙ্গণে আড়াইঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে রাস্তা ফাঁকা করতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়লে ইসকন কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন ভবনে ও গাড়িতে হামলা শুরু করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে।’
এর আগে, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে হওয়া মামলায় রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
এই আদেশের পরপরই এজলাসের বাইরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ভক্ত-অনুসারীরা। এরপর প্রায় আধঘণ্টা এজলাসের বাইরেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। বেলা সোয়া ১২টার দিকে তাকে এজলাস থেকে বের করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজনভ্যানে তোলা হলে প্রিজনভ্যানের সামনেই বসে বিক্ষোভ করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।
দুপুর ১২টার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারী ও আইনজীবীদের একাংশ। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা তারা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর বেলা ৩টার দিকে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ।