আইনজীবী হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে আজও উত্তাল চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার উগ্রবাদী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের হামলায় নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের চার দফা নামাজে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ার চুনতিতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এসব নামাজে জানাজায় লাখো মুসল্লির ঢল নেমেছিল। সবার চোখেমুখে শোকের ছায়ার পাশাপাশি ছিল ক্ষোভের আগুন। এ সময় অনেকেই ছিলেন অশ্রুভারাক্রান্ত। তারা আইনজীবী আলিফের হত্যার বিচারের পাশাপাশি দ্রুত ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে, সকাল সোয়া ১১টায় জমিয়াতুল ফালাহ মাঠে, বেলা আড়াইটায় লোহাগাড়া সদরের শাহপীর মাঠে এবং বাদ আসর নিজগ্রাম লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গা গ্রামে এসব নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রধান নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জমিয়াতুল ফালাহ মাঠে। লাখো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। এতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্যসচিব নাজিম উর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, নগর জামায়াতের নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শরিক হন।

নামাজে জানাজা শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিলে মিছিলে নগরীর টাইগারপাস এলাকায় জড়ো হন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অবিলম্বে অ্যাডভোকেট আলিফের খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। নইলে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন ছাত্র নেতারা।

আটক ৩৩ : হত্যায় জড়িত ৭ জন শনাক্ত
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা ও এলোপাতাড়ি হামলার ঘটনায় চট্টগ্রামের সর্বমহলে এক দিকে চরম ক্ষোভ, অন্য দিকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বুধবার আদালত বর্জন করেছেন এবং আজ বৃহস্পতিবারও আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিকে সাইফুল হত্যার সাথে জড়িত সাতজনসহ অন্তত ৩৩ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে যৌথ বাহিনী।

মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনার পর থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত নগরীর পাথরঘাটা, মেথরপট্টি, আন্দরকিল্লা, হাজারি গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার উগ্রবাদী সনাতনী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার তার অনুসারীরা আদালত ভবন ও কোর্ট হিল মসজিদে ভাঙচুরসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। মসজিদের ভাঙচুরে বাধা দেয়ার সময় আদালতপাড়া থেকে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইসকন ও ইসকনের আড়ালে পতিত আওয়ামী ক্যাডাররা হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে।

আইনজীবী সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, সাইফুল আদালত ভবন থেকে নামার পর চিন্ময়ের অনুসারীরা তাকে টেনেহেঁচড়ে বান্ডেল রোডে রঙ্গম সিনেমা হলের সামনে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো: তারেক আজিজ বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুল ইসলাম খুনের ঘটনায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আদালতপাড়ায় তাণ্ডব এবং আইনজীবী নিহতের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা হবে। মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে একটি আইনজীবীকে হত্যা ও আরেকটা পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলা।’

আদালতে আজও কর্মবিরতি : এ দিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে নিত্যদিনের মতো কোনো ভিড় ছিল না। ছিল সুনসান নীরবতা। তবে নামাজে জানাজা উপলক্ষে আদালত অঙ্গনে হাজির হয়েছিলেন বিপুলসংখ্যক আইনজীবী। তাদের চোখে মুখে ছিল ক্ষোভের আগুন। আর দাবি ছিল উগ্রবাদী ইসকনকে নিষিদ্ধ করা, চিন্ময়কে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো এবং খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার। সেখানে সমবেত আইনজীবীরা আলিফ হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আদালত বর্জনেরও হুঁশিয়ারি দেন। বৃহস্পতিবারও দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। এ ছাড়া জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজনসহ আরো পাঁচ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

সিদ্ধান্তগুলো হলো- সমিতির পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ করা, ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের সব আদালতের কার্যক্রমে কর্মবিরতি, মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বৃহস্পতিবার বাদ জোহর কোর্ট হিল জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল। এ জন্য আজকের অবকাশকালীন প্রীতি সমাবেশ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১ ডিসেম্বর বেলা ২টায় আইনজীবী সমিতির দোয়েল ভবনের সামনে থেকে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং সমিতির বার্ষিক ইনডোর গেইমস স্থগিত থাকবে।

হত্যায় জড়িতদের মধ্যে সাতজন শনাক্ত : সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় আটকদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ।

বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গা এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। ছাত্রজীবনে মেধাবী আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাস করেছিলেন। পরে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি পাস করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। তিনি সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ছিলেন।

পুলিশের ৩ মামলা, আসামি ১৪৭৬
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। নগরের কোতোয়ালি থানা পুলিশের করা এসব মামলায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আইনজীবী হত্যার ঘটনায় পৃথক কোনো মামলা হয়নি।

পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ওই সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন পুলিশের ওপর হামলা করেছে এবং সাতজন আইনজীবী হত্যায় জড়িত।

এ দিকে হত্যার শিকার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা এবং দাফন শেষে চট্টগ্রাম ফিরছে তার পরিবার এবং সহকর্মীরা। তবে হত্যার ঘটনায় গতকাল তারা মামলা করেননি। মামলার বিষয়ে ওই আইনজীবীর পরিবার এবং সহকর্মীরা মিলে রাতে সিদ্ধান্ত নেবেন।

নগর পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরতদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ১২ জন সদস্যও আহত হন। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ব্যবহৃত একটি গাড়িও।

চট্টগ্রাম আদালতে প্রথম নামাজে জানাজা : অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের প্রথম নামাজে জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় কোর্টহিলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, শামসুল আলম, হাসান আলী, কবির হোসাইন, ফজলুল বারীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী শামিল হন।

নামাজে জানাজার আগে আদালত পাড়ার সোনালী ব্যাংকের সামনে এবং জানাজা নামাজ শেষে উপস্থিত আইনজীবীরা অবিলম্বে অ্যাডভোকেট আলিফের খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি ও ফাঁসির দাবি জানান। একই সাথে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিও জানান তারা। এ সময় কেউ কেউ সহকর্মী আলিফের স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের প্রিয় ভাই আলিফ গতকাল ইসকন সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। তিনি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে আসামির প্রিজন ভ্যান ঘেরাও করে রেখে গতকাল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। এটিও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড বলে আমরা মনে করি। এই হত্যার বিচারের দাবিতে আইনজীবী সমিতি জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান নেবে বলে তিনি জানান।

আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা লড়বেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামিদের পক্ষে আইনজীবী লড়লে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাব আমাদের ভূমিকা কী হবে।

গ্রামের বাড়িতে হাজারো মানুষ রাজপথে : শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের লাশবাহী গাড়ি লোহাগাড়ায় পৌঁছলে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। ইসকনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ইসকন লীগের সন্ত্রাসীরা হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন জনতা। বেলা আড়াইটায় লোহাগাড়া সদরের শাহপীর মাঠে শহীদ সাইফুল ইসলামের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন লোহাগাড়া বটতলী কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব ডক্টর মাওলানা মাহমুদুল হক উসমানী।

পরে সাইফুলের লাশ তার নিজ গ্রাম চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে সাইফুলকে শেষ বিদায় জানান। আসরের নামাজের কিছু পরে সর্বশেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন সাইফুলের ভগ্নিপতি কাজী মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দিন সাদী। এখানে নামাজে জানাজাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ বদরুল হক, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আবুল কালাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আ ন ম নোমান, সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুল হক নিজামি প্রমুখ। নামাজে জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

নেতৃবৃন্দ যা বললেন : জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে নামাজে জানাজাপূর্ব সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা অত্যন্ত জঘন্য ও নিন্দনীয় অপরাধ। একটি গোষ্ঠী পতিত স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে অস্থির করার জন্য ক্রমাগতভাবে দুরভিসন্ধি ও অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থির করে তুলতে চায়। দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের দুরভিসন্ধির ব্যাপারে পরিপূর্ণ সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ। তাদের অপচেষ্টা অতীতেও ব্যর্থ হয়েছে, আগামীতেও ব্যর্থ হবে, ইনশাআল্লাহ। সাইফুল ইসলাম সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদ হয়েছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ইসকনের সন্ত্রাসীরা তরুণ এই আইনজীবীকে আদালত চত্বর থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সাইফুল ন্যায়ের পথে লড়েছেন, সত্যের পথে লড়েছেন। সত্যের কাছে পরাজিত হয়ে ইসকন সন্ত্রাসীরা আইনজীবী সাইফুলকে কুপিয়ে শহীদ করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জনসাধারণকে শান্ত থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ইসকন সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যার বিচার হবেই ইনশাআল্লাহ। তিনি অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গতকাল ইসকন কিভাবে আমার ভাইকে শহীদ করেছে তা আপনারা দেখেছেন। বাংলার পলাতক ডাইনি হাসিনা ভারতে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। আওয়ামী লীগের এই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হবে না। ইসকন একটি উগ্র সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠী। অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দেশে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানরা অন্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। আর এই সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের আর নিস্তার দেয়া হবে না। বিগত খুনি হাসিনা তিলে তিলে এই জঙ্গি সংগঠন ইসকনকে প্রতিষ্ঠা করেছে। অবিলম্বে আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

জানাজা নামাজের পূর্বে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm