পতিত স্বৈরাচার আবার ক্ষমতা দখলের দ্বিবাস্বপ্ন দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনে উগ্রবাদী হিন্দুদের হামলা এবং ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ভয়েস অব টাইমস’ নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিলও করে সংগঠনটি।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুধুমাত্র এক চিন্ময়ের জন্য তা না। এই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে, এদেশকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। বাংলাদেশকে কেউ কেউ বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়ার চেষ্টা করে। চিকেন নেক দখল করে নেয়ার হুমকি।’
‘কিন্তু দখলের দিন শেষ। বুঝতে হবে, এত বাহিনী থাকার পরেও পালিয়ে যেতে হয়েছে। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত থাকার পরেও দখলের স্বপ্ন দেখেন! সেই স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন হিসেবে থেকে যাবে। ৩৬ কোটি হাত প্রতিরোধ করবে। সংস্কার, আধিপত্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী যেকোনো উদ্যোগকে এই সরকারই শুধু নয়, এদেশের ১৮ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও চেষ্টা করবে,’ বলেন তিনি।
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘আমরা আজকে শুধু প্রতিবাদ জানাচ্ছি- এইটুকুই না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে ষড়যন্ত্র দেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলছে, তা শেষ হয় নাই। কোনো অবস্থাতেই ভাবার কারণ নেই আপনার অধিকার আপনি এমনি এমনি ফেরত পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘যেরকমভাবে জনাব তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, আন্দোলনে ছিলেন, আন্দোলনে আছেন এবং থাকবেন। আগামী দিনের লড়াই হবে আরো কঠিন। দেখেন, আস্তে আস্তে আমাদের সামনে কঠিন সময় আসতেছে। এই সময় দরকার ঐক্য। শুধু ঐক্যই পারে যেকোনো ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করতে এবং সম্প্রসারণবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধ করতে।’
অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাহেব দিল্লীতে গিয়ে বলেছিলেন, আমাদেরকে আরেকটু ক্ষমতায় রাখেন, জনগণকে বলেন না, জনগণের ভোটে তারা বিশ্বাস করে না। সেজন্যই ‘১৪, ‘১৮ ও ’২৪-এ নির্বাচন কী হয়েছে দেশের মানুষ দেখেছে। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এখন যখন পতিত স্বৈরাচারকে জায়গা দিয়েছে এখন তাদের গাত্রদাহ।’
‘কারণ তাদের দেশের (ভারত) কয়েক লাখ মানুষ আমাদের দেশে। আমাদের দেশের যুবকরা চাকরি পায় না আর ৫ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমেই পাঠায়। আর ব্যাংকের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে যা পাঠায় তা ধরলে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর তারা বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়াতে রেমিট করে।’
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করে, আমাদের দেশে যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ে তখন তারা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে, আমাদের দেশের মানুষের যখন পানি দরকার তখন তারা বাঁধ দিয়ে দেয়, তারা পানি দেয় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও যখন তাদের দেশে বন্যা হতে থাকে তখন ফেনীর ওপারে বাঁধ খুলে দিলো, তাতে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ভেসে গেল। আবার তিস্তাতেও গজলডোবার বাঁধ খুলে দিলো, তাতে রংপুর, গাইবান্ধাসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো ভেসে গেলো অর্থাৎ তারা শুষ্ক মৌসুমে আমাদেরকে পানি দেয় না, আর বর্ষাকালে পানি ছেড়ে দিয়ে কষ্ট দেয়, তারা আমাদেরকে এভাবে শোষণ করতে চায়, নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যখন তারা (ভারত) দেখেছে তাদের সেই আজ্ঞাবহ সরকার নেই, পালিয়ে গেছে। এখন দেখেছে, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’
‘এই যে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চলে গেলো একটা সুইস কোডের মাধ্যমে, কই সেসময়ে যে কনসালটেন্ট ছিল সেই কনসালটেন্টের নাম কি? আপনাদের মনে থাকার কথা, অনেক ভুলে গেছে। কাজেই সব কিছুর সাথে জড়িত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য সবচেয়ে বেশিভাবে ষড়যন্ত্র করছে এই পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া এবং পতিত স্বৈরাচার।’
ভয়েস অব টাইমসের সভাপতি ফারুকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।