শাহবাগীদের বিচার চাইতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় জনরোষের মুখে পড়েন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘ফ্রেমে বন্দী ৩৬ জুলাই : অভ্যুত্থানের পূর্বাপর’ শীর্ষক ফ্যাসিবাদবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শেষ দিনে পরিদর্শনকালে ছাত্র-জনতার জনরোষের মুখে পড়েন তিনি।
প্রদর্শনীতে জামায়াতের আমির এসেছেন জানতে পেরে হঠাৎ ছাত্র-জনতার ভিড় দেখা দেয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শন শেষে জামায়াত আমির যখন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছিলেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্র প্রশ্ন করেন ‘আমির সাহেব, শাহবাগীদের বিচার কবে চাইবেন?
জামায়াত আমির এই প্রশ্ন শুনেও না শোনার ভান করেন। এ সময় উপস্থিত জামায়াত-শিবিরের নেতাদের একাংশ ঢাবির ওই ছাত্রের ওপর ক্ষিপ্ত হন। কিছুক্ষণ পর আরেকজন ছাত্র আবারো একই প্রশ্ন তোলেন- আমির সাহেব, শাহবাগীদের বিচার কবে চাইবেন?
এবারো জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নেতা রাগ দেখান। এতে জামায়াত আমির বিরক্ত হয়ে বলেন- ‘আমাকে কথা শেষ করতে দিন’।
জামায়াত আমিরের বক্তব্য শেষ হতেই শাহবাগের বিচারের দাবিতে ছাত্র-জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে প্রদর্শনী স্থল।
‘বিচার বিচার চাই, শাহবাগীদের বিচার চাই,’ শাহবাগীদের বিচার করতে হবে, এই বাঙলায় শাহবাগীদের কোনো জায়গা নাই ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।
এ সময় ছাত্র-জনতার সাথে তাল মিলিয়ে জামায়াত-শিবিরের বহু নেতাকর্মীও শাহবাগীদের বিচারের দাবিতে স্লোগানে দেয়। এতে জামায়াত-শিবিরের নেতারা চুপ হয়ে যান।
এ সময় দেখা যায়, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম জামায়াত আমিরের সামনে এসে দাঁড়ান। এরপর জামায়াত আমিরের হাত ধরে প্রদর্শনী থেকে বের হতে সহায়তা করেন।
একপর্যায়ে জামায়াত আমির নিজেও মুষ্টিবদ্ধ হাত উঠিয়ে শাহবাগের বিচার চাই স্লোগানে সমর্থন জানান।
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর আওয়ামী সহযোগী বিভিন্ন বাম সংগঠনের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি দল তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়। আওয়ামী সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তারা শাহবাগেই দিনের পর দিন অবস্থান নিয়ে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করে।
তাদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আইন নিজেদের মতো সংশোধন করে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে। এছাড়া জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ, হেফাজতে ইসলামি নেতাদের গ্রেফতারসহ নানা দাবি এখান থেকে তুলে আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করত আওয়ামী লীগ সরকার।
শাহবাগীদের আন্দোলনের আগে আইনে শুধুমাত্র সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আপিলের সুযোগ ছিল। কিন্তু আইন সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পায়। পরে বিচারে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয় এবং তা কার্যকরও হয়।