ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম একটি। সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। কিন্তু ধনীদের অনেককেই হজ পালন করতে দেখা যায় একাধিকবার। এখন বিষয় হলো, ধনী-গরিব যেই হোক; হজ পালনের জন্য নগদ অর্থের নিশ্চয়তা হিসেবে লাগে বিদেশি মুদ্রা। এ ক্ষেত্রে ডলার-রিয়াল যেটাই হোক না কেন, এই বিদেশি মুদ্রা ক্রয়, বহন ও খরচের ক্ষেত্রে হাজিদের পড়তে হয় বিভিন্ন ধরনের জটিলতায়। বিশেষ করে হজযাত্রীদের আগে দেশের খোলাবাজারে ডলার ও রিয়ালের দর অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এতে করে হাজিদের বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। এমন বাস্তবতায় এ নগদ ডলার বা রিয়াল বহনের ঝামেলা এড়াতে হাজিদের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যাংকাররা।
তথ্য বলছে, প্রতি বছরই হজের ঠিক আগেই দেশের খোলাবাজারে ডলার ও রিয়ালের দাম বাড়ে। গত বছর হজের আগে রিয়ালপ্রতি দাম বেড়েছিল দেড় থেকে ২ টাকা আর ডলারের দাম বাড়ে ৪ থেকে ৬ টাকা। তবে সে সময় যেসব হাজি ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করেছেন, তারা এ বাড়তি অর্থ খরচের ঝামেলা থেকে সুরক্ষা পেয়েছেন। সম্প্রতি হাজিদের এ প্রবণতা বেড়েছে। ফলে হজের আগে ও পরের মাসগুলোতে কার্ডে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনও বেড়েছে।
এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের মার্চে কার্ডে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয়েছিল মাত্র ২৪১ কোটি টাকা। মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৮ কোটি টাকা। আর হজের মাস জুনে এ খরচের পরিমাণ ছিল ৪০০ কোটি টাকা। এমনকি ওই সময় থেকেই কার্ডে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে, যা চলতি হজ মৌসুমেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কার্ডে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয়েছে ৭৭৭ কোটি টাকা। হজের কারণে আগামী জুনে এটি হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
যেভাবে নিতে হবে কার্ড
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এখন দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড সুবিধা চালু করেছে। আগে এ ধরনের সেবা মিলত মূলত ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে ডেবিট কার্ড। এজন্য আগ্রহী গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে হিসাব খুলতে হয়। এরপরই মিলবে দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড। আর বিদেশে যাওয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংকের টাকা জমা করে এনডোর্সমেন্ট করে নিতে হবে। তাহলেই ওই কার্ড দিয়ে বিদেশে খরচ করা যাবে। পাশাপাশি বিদেশের এটিএম বুথ থেকেও ডলার বা অন্য মুদ্রা তোলা যাবে। তবে বিদেশের এটিএম বুথ ব্যবহার করলে তার জন্য কিছু মাশুল গুনতে হবে। আর কার্ডে কেনাকাটা করলে কোনো মাশুল দিতে হবে না। এ কার্ড দিয়ে দেশে বসে বিদেশের হোটেল বুকিং, নির্দিষ্ট পরিমাণের কেনাকাটাসহ নানা খরচ করা যাবে।
বর্তমানে এ সেবা চালু রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের।
এর বাইরেও হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ কার্ডের ব্যবস্থা রেখেছে কয়েকটি ব্যাংক। যার মধ্যে রয়েছে—ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি।
হজ এলেই কেন বাড়ে ডলার ও রিয়ালের দর দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেন। তাদের বেশিরভাগেরই চাহিদা থাকে নগদ ডলার বা রিয়ালের। কিন্তু সে অর্থে দেশে ডলার বা রিয়ালের সরবরাহ কম থাকায় চাহিদা বাড়লেই ব্যবসায়ীরা এসব মুদ্রার দাম বাড়িয়ে দেন। আবার হাজিরা দেশে ফেরার সময় নগদ বিদেশি মুদ্রা নিয়ে আসেন। ওই মুদ্রাই তারা আবার খোলাবাজারে বিক্রি করেন। এতে আগের দরে ফেরে ডলার ও রিয়ালের দাম।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক ডলার বা রিয়াল কোনোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করে না। বিদেশফেরত যাত্রীরা ব্যাংকের কাছে মুদ্রা বিক্রি করলে সেই মুদ্রাই পরে গ্রাহকদের কাছে ব্যাংক বিক্রি করে। এজন্য ব্যাংকে নগদ ডলারের ভালো সরবরাহ থাকলেও অন্য মুদ্রার কম। কারণ, বিদেশফেরত যাত্রীর মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিক। তারা ব্যাংকে না এসে খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারে গিয়ে বিদেশ থেকে সঙ্গে আনা বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করেন। এ ছাড়া খোলাবাজারের তুলনায় ব্যাংকের পরিচালন খরচ অনেক বেশি। ফলে খোলাবাজারের চেয়ে ব্যাংকে ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রার দামও কিছুটা বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, খোলাবাজারে যে পরিমাণ ডলার ক্রয়-বিক্রি হয় তা দেশের বিদেশি বাণিজ্যের আধা শতাংশেরও কম। সুতরাং খোলাবাজারে ডলার বা বিদেশি মুদ্রার দাম বাড়লেও ব্যাংকে এর প্রভাব পড়ে না। এ ছাড়া হুন্ডি যতদিন থাকবে খোলাবাজার নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই কঠিন।