বাজেট: ৪০ শতাংশ বরাদ্দ যাবে ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪

সরকারকে আগামী বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ। আর এতে করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো কঠিন হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুসারে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মোট ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট থেকে সরকার এই তিন খাতে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে।

অন্যদিকে বরাদ্দের মধ্যে সুদ বাবদ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা, ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৮৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আয়ের তুলনায় মজুরি, পেনশন, ভর্তুকি ও সুদ বাবদ ব্যয় বেড়েছে, যা সরকারের রাজস্ব পরিসরকে সংকুচিত করেছে।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যদি অবিবেচনামূলক ব্যয় বাজেট বরাদ্দের বেশির ভাগই খেয়ে ফেলে, তাহলে খুব বেশি কিছু বাকি থাকে না।’

পাঁচ থেকে সাত বছর আগে মজুরি, ভর্তুকি এবং সুদে খরচ ব্যাপকভাবে বাড়ছে বলে তারা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

‘এই অবস্থায় পড়তে সরকারের প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে, এটি থেকে বেরিয়ে আসতে আরও ১০ বছর সময় লাগবে,’ বলেন তিনি।

তবে দেশকে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

অভ্যন্তরীণ ঋণ, ভর্তুকি ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পদের স্বল্পতার কারণে সরকার নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে পারছে না।

অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয়ক্ষেত্রেই সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় প্রতিবছর বাড়ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ধারণা করছে যে এটি আরও বাড়তে পারে।

চলতি অর্থবছরে সরকার সুদ পরিশোধে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যা প্রথমবারের মতো সংশোধিত বাজেটে ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

আগামী অর্থবছরে ২৩ শতাংশ বরাদ্দ বাড়াতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়ন আগামী বছরের বাজেট সংশোধনের সময় সুদ পরিশোধে বরাদ্দ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সুদ পরিশোধ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।

অভ্যন্তরীণ খাতে পেমেন্ট ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২১৩ কোটি টাকায়। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে তিন গুণ।

ট্রেজারি বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিলের খরচ বাড়ছে। এতে সুদের ব্যয়ও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুনে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

যদিও জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মতো সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বর্তমানে কম এবং সেগুলির বিপরীতে সুদের হার কমেছে, অনেক স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। এর অর্থ এই খাতে সরকারের ব্যয়ও বেড়েছে।

৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে সরকারের বরাদ্দ ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চূড়ান্ত বরাদ্দ ঠিক না হলেও আগামী বছরের বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের কাছাকাছি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৯-এর আগে বেশ কয়েক বছর সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়নি।

২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২২ অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতে সরকারের ভর্তুকি ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা থেকে ১১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। ২০২৩-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকায়।

চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটেও ভর্তুকির পরিমাণ একই রাখতে পারে সরকার।

গত দুই বছরে সরকার কয়েক দফা বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম বাড়ালেও বিপুল বকেয়ার কারণে এ খাতে ভর্তুকি ব্যয় এখনও কমেনি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য বছরে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৮০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে এ বরাদ্দ ৯ শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তবে পেনশন ও গ্র্যাচুইটি অন্তর্ভুক্ত করা হলে এ খাতে ব্যয় এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন অগ্রাধিকার খাতে সরকারের ব্যয় বাড়লেও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে পারেনি।

সম্পদের স্বল্পতার কারণে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও উল্লেখযোগ্য হারে বরাদ্দ বাড়াতে পারছে না।

বয়স্ক ভাতার ক্ষেত্রে বয়স্করা মাসে মাত্র ৬০০ টাকা পান।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় মাসিক ভাতা বাড়ানোর কথা বললেও সম্পদের সংকটের কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ বাড়ায়নি।

সৌজন্যঃ ডেইলি ষ্টার

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm