শুধুমাত্র দুবাইয়ে ৫৩২ বাংলাদেশির গোপন সম্পদ রয়েছে। আবাসন ব্যবসার আড়ালে রাখা এ সম্পদের মূল্য সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সংযুক্ত আবর আমিরাতের (ইইউ) ট্যাক্স অবজারভেটরি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে এ তথ্য। তাতে বলা হয়, ২০২২ সালে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করেছেন ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। বিদেশে বিনিয়োগের এই অর্থের শতভাগই পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতে অর্থপাচার ক্রমশ অনিরাপদ হয়ে পড়ায় নতুন এই গন্তব্য ঠিক করে নিয়েছে পাচারকারীরা।
গত বছর দুবাইয়ে আরো ৪৫৯ বাংলাদেশির অন্তত এক হাজার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশিত হয়। এর ভিত্তিতে রিট হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ওই বছর ১৫ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ পৃথক তিনটি সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। বাকি দুই সংস্থা হচ্ছেÑ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তিন সংস্থারই অর্থপাচারের অপরাধ তদন্তের এখতিয়ার রয়েছে। সংস্থাগুলো পাচারের ধরন বুঝে সপ্রণোদিত হয়েই অর্থপাচারের তদন্ত করার কথা। কিন্তু কার্যত মোটা দাগের অর্থপাচারের তদন্ত করতেও প্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষায় থাকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার। প্রতিষ্ঠানগুলোর যে আইনি দায় রয়েছে তা থেকে এড়িয়ে চলার নীতি শুরু থেকেই লক্ষণীয় হয়ে ওঠে, যা পাচারের ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের।
অর্থপাচার কমবেশি সব সময়ই ছিল। কিন্তু এটিকে ‘অপরাধ’ গণ্য করে দেশে প্রথম আইন হয় ২০০২ সালে। দুর্বলতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে ওই আইন কার্যকারিতা হারায়। পরে এ আইন বাতিল করে প্রণীত হয় ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯’। পরিপূর্ণতা না পাওয়ায় সেটিও বাতিল করে প্রণয়ন করা হয় ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২’। উভয় আইনে সব ধরনের অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের এখতিয়ার দেয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-কে। ২০১৫ সালে এই এখতিয়ার পুনর্বিন্যাস করে আবারো সংশোধনী আনা হয়। এতে অর্থপাচার সংক্রান্ত ২৭টি অপরাধের মধ্যে একটিমাত্র অপরাধ (ঘুষ ও দুর্নীতি) অনুসন্ধান-তদন্তের এখতিয়ার থাকে দুদকের তফসিলে। ২৮ ধরনের এখতিয়ার পুনর্বণ্টন করা হয় এনবিআর, সিআইডি, নারকোটিকস, পরিবেশ অধিদফতর, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে। এর ফলে বাহ্যত দুদকের এখতিয়ার হ্রাস পায়। অর্থপাচারের অধিকাংশ এখতিয়ার অন্য সংস্থাগুলোকে দেয়া হয়। এর ফলও হয়েছে তথৈবচ। অর্থপাচারের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ ঘটাচ্ছে না কোনো প্রতিষ্ঠানই। সবার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে দায় এড়ানোর চেষ্টা, যা অর্থপাচার সংশ্লিষ্টদের অতি প্রত্যাশিত একটি অবস্থা। অর্থপাচারকারীরা যেন এমনটিই চেয়েছিল।
এদিকে ‘এখতিয়ার নেই’ এমন দাবি করে দুদক অর্থপাচারের বিষয়ে থাকছে নির্বিকার। দু-চার দশ লাখ কিংবা কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদ অর্জন’-এর কথিত দুর্নীতি নিয়ে দুদককে যতটা ব্যতিব্যস্ত দেখা যায়, ততটাই অনাগ্রহ দেখা যায় হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার অভিযোগগুলোর বিষয়ে। যদিও আইনজ্ঞরা মনে করছেন, ২৮ ধরনের সম্পৃক্ত অপরাধের অভিযোগ দুদকের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কারণে দুদক অর্থপাচারের লাগাম টেনে ধরতে পারছে নাÑ এমন দাবি সংস্থাটির অজুহাত মাত্র। এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সীমাবদ্ধতাই নেই। বরং রয়েছে আন্তরিকতার ঘাটতি। দুদক চাইলে সব ধরনের অর্থপাচারের অনুসন্ধান-তদন্তই করতে পারে। এর সপক্ষে যুক্তি দিয়ে সংস্থাটির সিনিয়র এক পরিচালক নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, ঘুষ এবং দুর্নীতি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। সব ধরনের অর্থপাচারের অনুসন্ধান-তদন্ত পরিচালনায় এটিই যথেষ্ট। তিনি বলেন, কোনো ধরনের অর্থপাচারই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়। অর্থপাচারের ৯৫ শতাংশই সংঘটিত হয় আমদানি-রফতানির আড়ালে ‘ওভার ইনভয়েস-আন্ডার ইনভয়েস’-এর মাধ্যমে। এর সঙ্গে কোনো না কোনো পর্যায়ে ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পণ্য আমদানি-রফতানিতে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকে ঋণপত্র ইস্যুকারী ব্যাংক। পণ্য আমদানি-রফতানিতে সংশ্লিষ্ট থাকে কাস্টমস, ভ্যাট, বন্দর কর্তৃপক্ষ। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার হলেও সহযোগিতা থাকে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানিএক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের। এ হিসেবে প্রতিটিতে রয়েছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর সম্পৃক্ততা। এই সম্পৃক্ততার ভিত্তিতেই দুদক সব ধরনের অর্থপাচারের অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারে। এ ছাড়া দুদকের হাতে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২৬(২) এবং ২৭ (১) ধারার মতো চূড়ান্ত একটি অস্ত্র, যা যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদক হামেশাই প্রয়োগ করছে। এর আওতায় নিয়ে আসতে পারে সকল বৃহৎ দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীকে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটিকে সেপথে হাঁটতে দেখা যায় না, যা শত-সহ¯্র-লক্ষ কোটি টাকা পাচারকারীদের জন্য পোয়াবারো। এ কারণে অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন পাচার রোধে নয়-বরং নানা অজুহাতে পাচারকারীদের রক্ষাকবচ হিসেবেই কাজ করছে।
বড় দাগের পাচার-নির্বিকার দুদক : অর্থপাচার প্রশ্নে দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘অর্জন’ বলতে আরাফাত রহমান কোকোর অর্থ ফেরত আনা। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অর্থ জব্দ করা। যদিও এটি দুদক নিজে ফেরত এনেছে কি না এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। তা সত্ত্বেও সংস্থাটি এটিকে নিজেদের ‘সাফল্য’ বলে দাবি করে। কুমিরের একই বাচ্চাকে সাতবার হাজির করার মতো অর্থপাচার রোধে সংস্থাটি বহু বছর ধরে এটিকেই সামনে আনছে। অর্থ ফেরত আনার নতুন কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে দেখা যায়নি। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের নামে অর্থপাচার, ব্যাংক লুট, আমদানি-রফতানির নামে ওভারইনভয়েস-আন্ডারইনভয়েসের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার প্রশ্নে সংস্থাটির মুখে টুঁ-শব্দটি নেই। কখনো কখনো পাচার বন্ধে ‘তেমন কিছুই করার নেই’ মর্মে দাবি করছে দুদক। সর্বশেষ গত ২৫ মে এক সেমিনারে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ দায় এড়িয়ে বলেন, টাকা পাচারের অপরাধে প্রণীত মানিলন্ডারিং আইনের ২৯টি ধারার মধ্যে মাত্র একটি ধারায় দুদক ব্যবস্থা নিতে পারে। বাকি ২৮টি ধারায় অপরাধ সংঘটিত হলেও দুদকের কিছুই করার নেই। অসহায়ত্ব ব্যক্ত করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মানিলন্ডারিং হলেই দুর্র্নীতি দমন কমিশন কিছুই করতে পারবে না। সরকারি কর্মচারী যদি মানিলন্ডারিং করে, তাহলে সেটা দেখতে পারে। বাকি ক্ষেত্রে যে মানিলন্ডারিং হচ্ছে, সেটি দেখার দায়িত্ব দুর্র্নীতি দমন কমিশন আইনে সুযোগ তেমন একটা নেই।
দুদক আইন সংশোধনের পর ২০১৬ সালে সামনে আসে পানামা পেপার্স এবং ২০১৭ সালে প্যারাডাইস কেলেঙ্কারির তথ্য। ওই সময় অফসোর কোম্পানির মাধ্যমে অর্থপাচারকারী ৬১ ব্যক্তি ও ৮ প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। এ দু’টি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথক অনুসন্ধান শুরু করে। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল সংস্থার তৎকালীন উপ-পরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) আখতার হামিদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠিত হয়। ওই টিম পানামা পেপার্স সংশ্লিষ্ট ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে এটি নিয়ে দুদককে এগোতে দেখা যায়নি। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি ২০২১ সালে একটি রিট (নং-১৪২৮/২০২১) করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের নেতৃত্বে তিন সংস্থার যৌথ টিম গঠন করে দেন। দুদক তাতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির ঘটনায় অদ্যাবধি কোনো মামলা হয়নি।
পানামা পেপার্সের তালিকায় নাম ওঠা একটি প্রতিষ্ঠান ‘বাংলা ট্রাক গ্রুপ’। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো: আমিনুল হক এবং তার দুই পুত্র তারেক ইকরামুল হক ও নাজিম আসাদুল হকের নাম ছিল। আমিনুল হক একাধারে প্রাইম ফিন্যান্সের পরিচালক, তারেক ইকরামুল হক প্রাইম ব্যাংকের পরিচালক। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ১ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণ ও ভাড়া, টেলিযোগাযোগ, খাদ্যপণ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিষ্ঠানটির পাচারকৃত অর্থের এই পরিমাণ দিয়েই পানামায় নাম ওঠা অন্যদের পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আন্দাজে যথেষ্ট।
মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’র গত বছর সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর একটি তালিকা প্রকাশ করে। তাতে ৪১তম অবস্থানে দেখানো হয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘সামিট পাওয়ার’। আগের বছর অবস্থান ছিল ৪২তম। প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে রয়েছেন মুহাম্মদ আজিজ খান। ব্যবসায়ী গ্রুপটি ১১২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গাপুরে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বন্দর, ফাইবার অপটিকসসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি জ্বালানি তেল আমদানি করছে। আন্তর্জাতিক দরের চেয়ে বেশি মূল্য পরিশোধ দেখাচ্ছে সামিট। মূল্য পরিশোধের পর যে অর্থ থেকে যাচ্ছে সেটি বাংলাদেশে ফেরত আসছে না। পাচার হয়ে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে।
ইউনাইটেড গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, সিকদার গ্রুপের মতো নামী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম রয়েছে অর্থপাচারকারীর তালিকায়।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৬০ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাচার হচ্ছে ব্যবসায়িক চ্যানেলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অঙ্ক পাচার হচ্ছে বেসরকারি জ্বালানি সেক্টরের হাত হয়ে। গত এক দশকে অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ীর নাম এসেছে অর্থপাচারের তালিকায়। যারা ব্রিটেনের ভার্জিন আইল্যান্ডে অর্থপাচার করছেন। ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ হিসেবে পরিচিত উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করছে উন্নয়নশীল ১৫০টি দেশ। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, পি কে হালদার কিংবা এস এম আমজাদ হোসেনের মতো অনেকেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। দুদক এদের দু-একজনের বিরুদ্ধে দায়সারা গোছের অনুসন্ধান শুরু করলেও মূল ব্যক্তিরা রয়ে গেছেন অধরা।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, এক সেন্সে সরকার এখন এই দাবি করতে পারে যে, আমরা তো আগের মতো গরিব নেই! আমরা ধনী হয়ে গেছি! দেশের অর্থনীতি উন্নত হয়েছে বলেই এখন অর্থপাচারও করা যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে বর্তমান সরকার আমলে অবৈধ উপার্জনের মাত্রা ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। এসব পাচার নিয়ন্ত্রণে ভালো আইন-কানুন হয়েছে। হলেও একটির সাকসেস রেট তেমন নেই। কিন্তু সাকসেস বলতে তারেক জিয়ার টাকা ফেরত আনাকেই প্রচার করছে সরকার। আর কোনো টাকা কিন্তু আনতে পারেনি। এর মধ্য দিয়ে এটিই প্রমাণ হচ্ছে যে, রাজনৈতিক প্রয়োজনে এ আইনকে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এর বাইরেও তো হাজার হাজার লোক অর্থপাচার করছে। তাকে তো আইনের আওতায় আনছেন না। সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, কিছুদিন আগে ১০ হাজার কোটি টাকা পাচারের একটি প্রশ্ন এসেছিল। আদালত থেকেই এটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি এলো, তাতে পাচারকারীরা আরো উৎসাহী হবেন। আদালতের মাধ্যমে ধরার যে প্রক্রিয়া ছিল সেটি এখন নেই। এর ফলে মানুষের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো: মঈদুল ইসলাম বলেন, দুদক এখানে ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’ করছে। বিদ্যমান আইনের অর্থপাচার রোধে দুদকের তেমন কিছু করার নেইÑ এ কথা সঠিক নয়। কারণ, মানিলন্ডারিং মানে অবৈধ সম্পদ। অবৈধ সম্পদ মানেই মানিলন্ডারিং। একটি ছাড়া অন্যটি হয় না। তিনি বলেন, দুদক অনেক সময় যে অপরাধের এখতিয়ার নেই সেটিরও অনুসন্ধান-তদন্ত চালিয়ে যায়। যেটিতে এখতিয়ার রয়েছে, সেটিতে বলছে এখতিয়ার নেই। আইনের বিধানকে অবজ্ঞা করে সংস্থাটি পিক অ্যান্ড চ্যুজ করছে।