ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোগ গণনা এখনো শেষ হয়নি। তবে অর্ধেক বা তার বেশি গণনা হয়ে গেছে। প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে দুটি কথা দৃঢ়তার সাথে বলা হয়। তা হলো, এবারো বিজেপি সরকার গঠন করবে না। কিন্তু গত দু’বারের মতো এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ২৭২ ভোট। অর্ধেক ভোট গণনা শেষে বিজেপির প্রাপ্ত আসন ২৪১টি। এর অর্থ হলো, প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে এখনো ৩১ আসনে পিছিয়ে রয়েছে দলটি। সেজন্য এবার বিজেপিকে দ্বারস্থ হতে হবে জোট শরিকদের। শরিকদের মধ্যে অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম এখন পর্যন্ত ১৬ আসনে এগিয়ে রয়েছেন। ১৪ আসনে এগিয়ে রয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ)। এ দু’জনে ভর করলেও চলবে না। বিজেপি সঙ্গে নিতে হবে আরো একাধিক শরিক দলকে। অন্য শরিকদের মধ্যে হারাষ্ট্রের শিবসেনার সিন্ধে গোষ্ঠী ৬ আসনে, বিহারে লোক জনশক্তি পার্টি ৫ আসনে এবং উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোক দল ৩ আসনে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া বিজেপির আরো কয়েকটি শরিক দল এক বা একাধিক আসনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে এগিয়ে রয়েছে। তাদের সাথেও বাঁধতে হবে বিজেপির ভবিষ্যত।
জোট শরিকদের তোয়াজ করে সরকার গঠন করলে ভবিষ্যতে অনেক কর্মসূচির ক্ষেত্রে বিজেপিকে বাধাগ্রস্ত হতে হবে। এ ধরনের সমস্যায় তারা গত দু’বার পড়েনি। সেজন্য পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।
অমর্ত্য সেনের প্রতীচি ইনস্টিটিউটের প্রধান জাতীয় গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, শরিক দলগুলোকে নিয়ে সরকার চালানো হবে এনডিএ জোটের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা।
তিনি আরো বলেন, এতদিন বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিজেপির নীতিই প্রাধান্য পেতো। জোট শরিকদের তোয়াক্কা করতে হতো না। বিশেষ করে বিভিন্ন বিলকে আইন পরিণত করার প্রশ্নে, জোট শরিকদের কথা কানেই নিতো না দলটি। কিন্তু এবার শরিকদেরও কথা শুনতে হবে। একইসাথে বিরোধীদের শক্তি ক্ষাণিকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ চাপেই পড়বে মোদি-শাহের সরকার।
১৯৯৯ সালেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। একাধিক শরিকদের নিয়ে তাদের পাঁচ বছর সরকার চালাতে হয়েছিল। তখন কোনো সঙ্কট তৈরি হলে অটল বিহারী বলতেন, ইন্দিরা গান্ধী ও কংগ্রেসের বিরোধিতা করে জোট ঘরানার রাজনীতিতে তিনি অভ্যস্ত ও স্বচ্ছন্দ।
কিন্তু বর্তমান বিজেপি তেমনটি পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে তারা এককভাবে জিততে অভ্যস্ত। শরিকদের উপর ভর করে কখনো সরকার চালাননি মোদি। ফলে নতুন সমীকরণের সাথে কিভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবেন, আগামী দিনই তা বলে দেবে। তবে জোট শরিকদের সাথে কিভাবে ওঠাবসা করছেন, তার উপরই নির্ভর করছে আগামী দিনে তার সরকারের বাঁচা-মরা। ভারতের ভবিষ্যত রাজনীতিতে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হতে চলেছে।
হয়তো এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নরেন্দ্র মোদির দফতর আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে ৯ জুন যখন চন্দ্রবাবু নাইডুর নতুন সরকার অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভায় শপথ নেবে, তখন সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। লোকসভার সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনও হয়েছিল।
এর কারণ, কেন্দ্রে চন্দ্রবাবু বা নীতিশ কুমারের মতো শরিকদের ওপরে যে বিজেপি তথা এনডিএর বাঁচা-মরা নির্ভর করবে আগামী দিনে।