জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লাইন কাটতে গেছেন টেকনিশিয়ান ইকবাল হোসেন ও তার সহকর্মীরা। এ সময় ইউএনওর বাসায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য এবং অন্যান্য লোকজন ইকবাল হোসেনকে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনওর) বাসভবনে এই ঘটনা ঘটে।
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, জুন মাসে সকল বকেয়া গ্রাহকের বিল আদায়ের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারে (ইউএনওর) বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কথা বলতে যায় টেকনিশিয়ানরা। একপর্যায়ে তারা বিদ্যুতে লাইন বিচ্ছিন্ন করতে চাইলে ইউএনওর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই আনসার সদস্য এবং বাসার অন্যান্য লোকজন লাইন টেকনিশিয়ান ইকবাল হোসেনকে বেঁধে রাখে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ দেওয়ানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইয়াহহিয়া সিদ্দিকীর সাথে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) গভীর রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা একটা মিটিংয়ে আছি।
এদিকে আনসার সদস্যদের সাথে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা খারাপ আচরণ ও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এমন একটি অভিযোগে মো: খায়রুল ইসলাম নামে এক আনসার সদস্য দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ইউএনওর বাসার আনসার সদস্যদের ইনচার্জ মো: খায়রুল ইসলাম একটি জিডি করেছেন।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্সের নির্দেশে ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ কর্মচারীকে আনসার সদস্যরা বেঁধে রাখেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী বিদ্যুৎকর্মীর।
তবে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেছেন ইউএনও শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স। তিনি নয়াদিগন্তকে বলেন, আমি ছুটিতে আছি। এসব বিষয়ে কিছুই জানি না।
দেওয়ানগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লাইন টেকনিশিয়ান ভুক্তভোগী ইকবাল হোসেন বলেন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ এলাকায় আবাসিক কোয়াটার বেলী-১, হাসনা হেনা-১ ও আনসার ব্যারাকের বিদ্যুৎ বিল গত দুই বছর ধরে বকেয়া রয়েছে।
ইকবাল আরো বলেন, জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেওয়ানগঞ্জ জোনাল অফিসের এ জি এম মো: শেখ ফরিদের নির্দেশে আমিসহ দু’জন বকেয়া বিলের জন্য ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় দায়িত্বশীল কাউকে না পেয়ে এ জি এম স্যারকে বিষয়টি জানাই। পরে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। এ সময় আমরা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি উপস্থিত আনসার সদস্যদের জানালে তারা ইউএনও স্যারকে ফোন করে জানায়। এরপর ইউএনও স্যার আমার সাথে কথা বলেন। তিনি জানতে চান কার নির্দেশে আমরা ওইখানে গিয়েছি। এরপর আমাদের এ জি এম স্যারের কথা জানিয়ে আনসার সদস্যদের মোবাইলটি দিয়ে দেয়। তখন আনসার সদস্যরা আমাকে বারান্দার বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাতে উপজেলায় কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
দেওয়ানগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের এ জি এম মো: শেখ ফরিদ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বিষয়টি সমঝোতার জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। যেকারণে আপাতত আমরা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি না।
শুক্রবার দেওয়ানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডি জি এম ইয়াহিয়া সিদ্দিকী বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবনে দেশের স্পর্শকাতর সেক্টর বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মীকে বেঁধে রাখার বিষয়টি দুঃখজনক। তবে বিষয়টি সমঝোতা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আর কোনো অভিযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। সেখানে কী ঘটেছে আমি জানি না। তবে শুনেছি তারা এসে আমাকে গালাগালি করেছে। তারা বলেছে ইউএনও হয়েছে তো কী হয়েছে, তার লাইন কাটা যাবে না?
এ নিয়ে সেখানকার কর্তব্যরত আনসারদের সাথে কথা কাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে কিছুক্ষণ আটকে রাখে। এ ঘটনায় আমার কোনো হাত নেই। পল্লী বিদ্যুতের ওই কর্মচারী পরিকল্পিতভাবে আমাকে ঘটনার সাথে জড়াচ্ছে।