শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি, এটা মনে রাখা উচিত।’ একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্র্রানজিট দিলে কোনো ক্ষতি নেই বলেও এ সময় উল্লেখ করেছেন তিনি। শেখ হাসিনা আরো জানিয়েছেন, তিনি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসকে জেলাসি করেন না। গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সকাল ১১ টায় ওই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। পরে শুরু হয় সাংবাদিকদের প্রশ্নপর্ব।

প্রথমেই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল চলাচলের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন আসে। দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা প্রসঙ্গও ছিল প্রশ্নটিতে। এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছে, দেশ বিক্রি ওজনটা কিসে মাপছে? কোন কিছু বিক্রি হলে তো ওজন মাপা হয়। এখন তো ইলেক্টনিক মেশিন আছে, আগে তো দাঁড়িপাল্লায় হতো। তো কিসে মেপে হচ্ছে?’ ভারতকে রেল ট্রানজিট দেওয়া নিয়ে ওই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যারা এই সমালোচনা করে তাদের এটা জানা উচিত, সারা পৃথিবীতে একটি মাত্র মিত্র শক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত ঢেলে দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করতে সহযোগীতা করেছে। আমাদের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ট্রেনিং পেয়েছে। পৃথিবীতে যারা মিত্রশক্তি, যারা যুদ্ধে সহযোগিতা করে, তারা কিন্তু ওই দেশ ছেড়ে যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকান সৈন্য, জার্মানিতে রাশিয়ান সৈন্য আছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। তারা মিত্রশক্তি হিসেবে আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখনই চেয়েছেন, তারা (ভারতের সৈন্য) দেশে ফেরত যাক, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্র্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন এবং তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপরও যারা কথা বলে, ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে, তারা এ কথা বলে কীভাবে? আসলে যারা এ কথা বলে, তারা নিজেরাই ভারতের কাছে বিক্রি হওয়া। কারণ আমরা তো দেখেছি, যখনই মিলিটারি ডিক্টেটররা (সামরিক স্বৈরাচার) এসেছে, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতের পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, যত ছোট হোক। আমরা আমরা সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং স্বকীয়তা বজায় রেখেই আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে কাজ করছি।’

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থায় দেশের মানুষ লাভবান হবে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কী বলে প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রেল যেগুলো বন্ধ ছিল (ভারতের সঙ্গে), সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। তাতে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওই অঞ্চলের মানুষগুলো উপকৃত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে।

‘আমরা বাংলাদেশে কি চারদিকে দরজা বন্ধ করে থাকব?’ এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডারই নেই। তাহলে সেখানে কি এক দেশ আরেক দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। সমস্ত যোগাযোগব্যবস্থা খুলে দিলাম, এর উপকার পাবে সাধারণ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে।’

এ সময় বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিদেশী একটি ম্যাগাজিনে এক নিবন্ধের প্রসঙ্গ তুলে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি লেখাটা পড়েছি। যেহেতু মামলা চলছে, আমি কোনো কমেন্ট করতে চাই না। কিন্তু একটা প্রশ্ন তাদেরকে করতে পারেন আমেরিকা হোক, ইউরোপ হোক, যেকোনো দেশেই, কেউ যদি বছরের পর বছর ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা সেই সরকার নেয়। কেউ যদি ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তাহলে কী ব্যবস্থাটা তারা নেয়। তার উত্তরটা কিন্তু এরা দেয়নি। দ্বিতীয় হলো শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে এত কথা হয়, কিন্তু সেই শ্রমিকদের ওয়েলফেয়ার ফান্ডের টাকা, কেউ ব্যবসা করলে ব্যবসার পাঁচ শতাংশ টাকা ওয়েলফেয়ার ফান্ডে দিতে হয়। এখন সেই শ্রমিকদের অর্থ যদি কেউ মেরে খায়, না দেয়, তাদের ন্যায্য পাওনাটা যদি না দেয়, তার বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে? ইউনূসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের সরকারের কেউ লাগেনি।’

গ্রামীন ব্যাংকে ড. ইউনূসের এমডি হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে একটা কথা, গ্রামীণ ব্যাংকটা তৈরি করেছিল জেনারেল এরশাদ সাহেবের আমলে। একজন এমডি খোঁজা হচ্ছিল, তখন ড. ইউনূসকে এনে সেই ব্যাংকের এমডি করা হয়। এই ব্যাংক কিন্তু তার নিজের করা না। সে সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করত। এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন তুলতেন। আর গ্রামীণ ব্যাংকটা হচ্ছে সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। ওই টাকা, বেতন সব কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হতো। সরকারের কেউ বাইরে গেলে জিও নিয়ে যেতে হতো। সেই চাকরিরত অবস্থায় সেটাকে তিনি নিজে এমনভাবে প্রচার করেছেন যে এটা যেন তার নিজেরই করা।’

তিনি বলেন, ওই ব্যাংকের আইনে ছিল যে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন এমডি থাকতে পারে চাকরিতে। ৬০ বছরের ওপরেও আরো ১০ বছর তিনি আইন ভঙ্গ করেই ছিলেন। যখন বাংলাদেশ ব্যাংক এই জিনিসটা তার নজরে আনে এবং তাকে আমাদের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিত সাবেক ও আমার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাহেব তাকে অনুরোধ করেছিলেন, যে আপনার তো বয়স হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ১০ বছর বেশি আপনি অবৈধভাবে এখানে আছেন। তো আপনি এখানে উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না। এমডি পদ তাকে রাখতেই হবে। ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে দুইটা মামলা করেন। এ কথা তো সেই পত্রিকাওয়ালারা লেখেনি। দুইটা মামলা করেন এবং দুইটা মামলাই হেরে যায়। মামলা কিন্তু কখনো সরকার করেনি। এখনো তার বিরুদ্ধে যে মামলা, এটা কিন্তু সরকার করেনি।

‘ড. ইউনূসকে গ্রামীণফোনের ব্যবসা আমিই দিয়েছিলাম’ এমন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটাও মনে রাখা উচিত। তাকে আমি দিয়েছিলাম কারণ গ্রামীণ ব্যাংক তার আমলে প্রায় কলাপস করে যাচ্ছিল। তখন আমার সরকার, আমি নিজে প্রথমে ১০০ কোটি টাকা, এর পরে ২০০ কোটি টাকা, তার পর আরও ১০০ কোটি টাকা, এই ৪০০ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দিয়ে ব্যাংকটা চালু রাখতে তাকে সহায়তা করি। তখন তিনি প্রস্তাব দেন যে গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা পেলে এর যে প্রফিটটা হবে সেটা গ্রামীণ ব্যাংকে জমা হবে এবং সেটা দিয়ে ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, আজ পর্যন্ত ওই গ্রামীণফোনের একটি টাকাও গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে কী না। দেওয়া কিন্তু হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শুধু এখানেই না, গ্রামীণ ব্যাংকের বিদেশ থেকে অনেক সময় অনেক অনুদান এসেছে, তার কয়টা টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে। প্রতিটা সময় ওইটা দিয়ে নতুন একটা ব্যবসা খুলে ব্যবসা করেছেন। কিন্তু কোনো ট্যাক্সই দেননি। এই যে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন, সেটা তো তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। কারণ তার বিরুদ্ধে যখনই মামলা হয়েছে, এটা বিদেশে নিয়ম আছে, যখনই মামলা হয়েছে, তিনি কিছু টাকা শোধ দিয়ে বসে আছে। তো যখনই কিছু টাকা শোধ দিলো, তখনই তো প্রমাণ হয়ে গেল যে তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দেন। এমনকি ওই টেলিনর, গ্রামীণফোন সেখানে থেকেও কয়েক দফায় তার কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে। আর লেবারদের যে ওয়েলফেয়ার ফান্ডের টাকা দেয়নি, ২০০৬ সাল থেকে একটি পয়সাও দেয়নি, তাই লেবাররা মামলা করেছে। মামলা কিন্তু সরকার করেনি। লেবাররা লেবার কোর্টে মামলা করেছে, সেই মামলায় সে শাস্তি পেয়েছে, এখানে আমার কী দোষ।

শেখ হাসিরা বলেন, ‘বরং আজকে তিনি যে উঠেছেন, সেখানে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা তো আমি করেছিলাম। তার মাইক্রোক্রেডিট সামিট, মাইক্রোক্রেডিট ইন্টারন্যাশনালি খুব গ্রহণযোগ্য ছিল না। আমি কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করি, জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি এবং আমি সবাইকে বোঝাই, কারণ আমিও ভাবতাম এটা বুঝি খুব ভালো, এটা মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি পরে দেখলাম এটা দারিদ্র্যমুক্ত না, এটা দারিদ্র্য লালন-পালন করে। আর ওই গরিব মানুষগুলো দিনরাত কাজ করার পর উচ্চহারে সুদ দিতে হয়।

শেখ হাসিনা এ সময় যশোরের যে এলাকায় হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে যেসব পরিবারকে মাইক্রোক্রেডিট দিয়েছিল, সে পরিবারগুলো কোথায় সে বিষয়ে সাংবাদিকদের খোঁজ নেওয়ার আহ্বান জানান। ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে এ সময় তিনি বলেন, এতই যদি করে থাকে, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন হলো না কেন বাংলাদেশে? দারিদ্র্য বিমোচন করলাম তো আমি। আজকে ৪১ দশমিক ছয় ভাগ থেকে নামিয়ে আমি ১৮ দশমিক সাত ভাগে এনেছি মাত্র এই ১৫ বছরে। সেই ক্রেডিটও নেয়। সেটাও কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখে ফেলে এটা গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, অমুক-সমুক করে ফেলেছে। আমার প্রশ্ন আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে দারিদ্র্যের হার কত ছিল, শেখ হাসিনা আসার পর কত কমেছে, সেটা একটু হিসাব করে বলুক না।

নোবেল প্রাইজের প্রসঙ্গ তুলে এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আবার লিখেছে নোবেল প্রাইজের জন্য নাকি তার সঙ্গে আমার… আমার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব নেই। আর আমি জীবনেও নোবেল প্রাইজের জন্য আমার কোনো আকাঙ্খাও নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার টাকাও নেই, পয়সাও নেই, আর আমি কখনো এটা চাইনি। হ্যাঁ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হওয়ার পরে শুধু আমার দেশে নয়, দেশে-বিদেশে অনেক বিদেশি, নোবেল লরিয়েট আমার জন্য লিখেছে। কই আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি, কারো কাছে বলতেও যাইনি। আমি তো কী পেলাম না পেলাম, ওটা নিয়ে আমি কখন ওগুলো আমার মাথার মধ্যেও নেই। এখন যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি, সে যখন একটা নোবেল প্রাইজ পায়, তার সঙ্গে আমি কনটেস্ট করতে যাব কেন?

তিনি আরো বলেন, ‘আমার কাছে অনেকে আসছে, আমি বলেছি না আমার ওসব পুরস্কারের দরকার নাই। আর এই পুরস্কার আমি দেখেছি আন্তর্জাতিকভাবে যারা পায়, এখানে তাদের কতটুকু অবদান সেটা না, এখানে আলাদা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই ওর মধ্যে আমার কোনো আকাঙ্খা নেই। আর বলে দিলো ওটা নিয়ে নাকি আমি উনাকে… মানে জেলাসি।’

ড. ইউনূসের প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘আরো অনেক বিষয় আছে। আমি সব বলতে চাই না। আমি এটা বলতেও চাইনি কখনো। পলিটিক্যাল পার্টি করতে গিয়েছিল, সেটাও লিখেছে। যখন ২০০৭ সাল, তখন রাজনৈতিক দল করতে গেল। তাহলে ব্যর্থ হলো কেন? রাজনৈতিক দল করতে পারল না কেন? সে যদি গ্রামের মানুষকে এতকিছু দিয়ে থাকে, তাহলে সেই মানুষগুলো তো তার জন্য ঝাঁপিয়ে আসবে। আসবে না? আসেনি কেন? কারণ সুদের চাপে তারা মৃতপ্রায় ছিল। সে জন্য তাকে কেউ সাড়া দেয়নি। সেখানে সে ব্যর্থ হয়েছে। সেই দায়িত্বও কি আমার? আমি তো তখন জেলে। আমাকে অ্যারেস্ট করার পরে তিনি তো কেয়ারটেকার সরকার এবং প্রেসিডেন্টকে এ ডাবল প্লাস দিয়ে আসছে। আমার বিরুদ্ধে তো একটার পর একটা মামলা।

তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটা প্রশ্ন আমার, আমি কখনো কিছু বলিনি এ পর্যন্ত। এই যে বিদেশে বিদেশে এত বিনিয়োগ করে বেরিয়েছে, টাকাটা কোত্থেকে আসছে? কার টাকা? কীভাবে কামাই করেছে এই টাকাটা? এটার বিনিয়োগ কীভাবে হলো? সেই প্রশ্নটা কি কেউ করেছে কখনো? কাদের টাকা? সেই জবাবটা দিক।’ তিনি বলেন, একটা সরকারি চাকরি, মানে একটা সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরিরত অবস্থায় সে বাইরে বিদেশে ব্যবসা করে। আমাদের আইন কী বলে? তারপরও তাকে সবাই মিলে আমরা তুলেছি, এটা ঠিক। তো এখন সবকিছুর দোষ আমার। কারণ আজকে সব থেকে বেশি যাকে আমিই দিলাম, তার গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক যখন অচল হয়ে গেল সম্পূর্ণ গ্রামীণ ব্যাংক শেষ হয়ে গেছে, ৯৬-৯৭ সাল, ৯৮-৯৯ সাল, সেই সময় যখন বন্যা, তিন মাস ধরে বন্যায় আমাদের বিপর্যস্ত অবস্থা, কীভাবে মানুষকে বাঁচাবো, সেই ব্যবস্থা… সেই সময় গ্রামীণ ব্যাংক বসে যায়, সেই সময় ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক আমি রক্ষা করে দিয়েছি। এটুকু কৃতজ্ঞতা তো মানুষের থাকা দরকার।

শেখ হাসিনা এ সময় চ্যালেঞ্জ দিয়ে উল্লেখ করেন, তিনি খোলা ময়দানে ড. ইউনূসের সঙ্গে বিতর্ক করতে আগ্রহী। শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে বেশি যে করে, তার বিরুদ্ধে এখন গীবত গেয়ে বেড়াচ্ছেন। উনাকে জেলাসি, উনাকে জেলাসি করার কী আছে? সে আসুক না, মাঠে আসুক, চলুক আমার সঙ্গে, আমেরিকায় ডিবেট হয় না, চলুক, আসুক কথা বলব। সব থেকে বেশি আর্থিক সুবিধা থেকে সব কিছু পেয়েছে আমার হাত থেকে। ওয়াশিংটনে তার মাইক্রোক্রেডিটে কেউ অংশগ্রহণ করে না। আমি গেছি, যেখানে হিলারি ক্লিনটন এসেছে, কুইন সুফি এসেছে। হ্যাঁ, আমরা তাকে খুবই প্রমোট করেছি, এটা ঠিক। এখন তার কথাটা হচ্ছে, উপকারীকে বাঘে খাক, যাতে উপকারটা স্বীকার করতে না হয়। এটাই তো বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা কারো সঙ্গে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা ফাদার অব দ্য নেশনের মেয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। এই জায়গাটায় কেউ আসতে পারবে না। আর সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো একটা সাময়িক ব্যাপার। কিন্তু আমি তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি দেশও বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। আমি সব সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চলি। তার জন্য অনেকবার ক্ষমতায় আসতেও পারিনি। আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমার দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আমার দেশের মানুষের মাথা যেন উঁচু থাকে, আমার সব সময় সেটাই কাজ। আমি এর-ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না।’

ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে কেউ ভাল চালাচ্ছে, কেউ খারাপ চালাচ্ছে। অনেক সময় কেউ ভাল চালাতে পারে না। এ চিরাচরিত নিয়মই আছে, যদি কোন ব্যাংক দূর্বল হয়ে যায় তাকে সহযোগীতা করা। কিংবা একটা ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটাকে সংযুক্ত করে দেওয়া। তিনি আরো বলেন, ‘এর পরও কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়, টাকা-পয়সার এত বেড়ে যায়, যে দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে তারপরে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। সেই অর্থ বানিয়ে ফেললো যে, শেষে আর দেশেই থাকা যায় না। তাহলে লাভ হয় কি?’

এ সময় তিস্তাচুক্তি ও তিস্তা প্রকল্প নিয়ে এক প্রশ্নের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা প্রকল্প আমরা নিয়েছি। নদীটি ড্রেজিং, পার বানানো, পানি সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২৬ সালে শেষ হবে। এর পর নবায়ন না হলেও ওই চুক্তি অব্যাহত থাকবে।

তিস্তা প্রজেক্ট ভারত ও চীন দুই দেশই করতে চায় এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিস্তা প্রজেক্ট যদি আমরা করি, তার জন্য চীন ও ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমরা বিবেচনা করব, কোন প্রস্তাব গ্রহণ করলে আমাদের দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে, সেটাই গ্রহণ করব। ভারত বলেছে তারা করতে চায়, তারা টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। চীনও একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে, ভারতও একটা করবে। আমাদের কাছে যাদেরটা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং লাভজনক, আমরা সেটাই করব।

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm