বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফ সীমান্তে ফের আতঙ্ক, বিজিপিবোঝাই নৌকা ফেরত

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪

মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। যুদ্ধে ভারী অস্ত্র, মর্টারশেল ও গোলার বিকট শব্দে টেকনাফ পৌরসভা, শাহপরীর দ্বীপসহ আশাপাশের সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

টেকনাফে যেকোনো অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড। রোববার চারটি নৌকাবোঝাই ৭০ জন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যকে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা।

এদিন সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী পানিসীমা দিয়ে দু’টি ট্রলারে বিজিপির অন্তত ৩০ জন সদস্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু নাফ নদীতে দায়িত্বরত কোস্টগার্ড সদস্য ট্রলার দু’টিকে প্রবেশ করতে দেয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের লোকজন জানানয়, কোস্টগার্ড সদস্যরা অনুপ্রবেশকারী দু’টি ট্রলারকে ফিরে যেতে বাধ্য করে। কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী বিজিপি সদস্যরা নাফ নদী হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফিরে যায়।

অপরদিকে রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে টেকনাফের জালিয়াপাড়াস্থ ট্রানজিট ঘাট-সংলগ্ন নাফ নদীর মোহনা হয়ে দু’টি ট্রলার যোগে আরো ৪০ জন বিজিপি সদস্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদেরকেও ফিরে যেতে বাধ্য করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা।

অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় সীমান্তের নিকটবর্তী লোকজনের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, নাফ নদীর মাঝামাঝি ট্রলারে অবস্থান করে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। কোস্টগার্ডের পক্ষে থেকে তাদের ফিরে যেতে আহ্বান করা হচ্ছে। যদিও ওই সময় নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে ও ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যাচ্ছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বিজিবি ও কোস্টগার্ডের দায়িত্বশীলরা।

রাখাইনের ৮০ ভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে বলে মিয়ানমারের বিভিন্ন সূত্র ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বর্তমানে টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে রাখাইনের সীমান্ত শহর মংডু দখলে দু’পক্ষের তীব্র লড়াই চলছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুস সালাম জানান, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর আবারো মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেল। রাতে সীমান্তের অনেকে ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সীমান্ত-সংলগ্ন শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকাসহ জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া ও আচারবনিয়ার আশপাশের বসতঘর ও স্থাপনা কেঁপে উঠে। সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার থেকে থেমে থেমে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। এতে সীমান্তের পাশে বসবাসকারী স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, নাফ নদীর একপাশে টেকনাফ ও বিপরীত দিকে মংডু টাউনশিপ। মাঝে মাত্র চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী দু’দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। মিয়ানমারে মংডু টাউনশিপের আশপাশের গ্রাম পেরাংপুরু, কাদিরবিল, হারিপাড়া, মংনিপাড়া, নলবইন্ন্যা, সুদাপাড়া, সিকদারপাড়া, নুরুল্লাপাড়া, হাস্যুরাতা ও ফাতংছা এলাকায় তীব্র লড়াই চলছে বলে জানা গেছে।

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো: মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, যেকোনো পরিস্থিতিতে কেউ যেন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
LifePharm