পুলিশ ও ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আর গুলি ছুড়বেন না।’ এরপর দু’হাত তুলে বলেন, ‘আপনারা আমাকে গুলি করেন।’ সাথে সাথে ১ নম্বর গেট থেকে পুলিশ তিন রাউন্ড ছররা গুলি ছুড়লে মাটিতে পরে যান আবু সাঈদের। শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় তার।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
নিহত শিক্ষার্থীর বাড়ি জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়ায়। তিনি ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র।
এর আগের রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আদনান আবীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে লেখেন, ‘যদি আজ শহীদ হই, তাহলে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন। ছাত্র সমাজ যখন মিছিল নিয়ে রুমে ফিরবে তখন আমাকেও বিজয়ী করে ঘরে ফিরবেন। একজন পরাজিতের লাশ কখনো তার মা-বাবা গ্রহণ করবে না। আদনান আবীর, সমন্বয়ক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বিকেলে প্রধান ফটকের সামনে নাম গোপন করার শর্তে সাঈদের এক বন্ধু বলেন, “সাঈদ খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। বিভাগে সে ছিল সেরা। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই সাঈদ ছিল সামনের সাড়িতে। এর আগেও ছাত্রলীগ তাকে কোটা আন্দোলন করার জন্য মেরেছিল। সব সময় জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিলের সামনে থাকত। ছাত্রলীগ ওকে খুব টার্গেট করেছিল। ঘটনার সময় আমি ওখানে ছিলাম। পুলিশ যখন তাকে গুলি করে তখন ছাত্রলীগ নেতারা পাশে ছিলেন এবং গুলি করতে বলেছিলেন। একজন পুলিশ গুলি করতে না চাইলে পাশে থাকা এক অফিসার বলছিলেন, ‘আমি করতে বলছি, গুলি কর।”
মেডিক্যাল ক্যাম্পাসে সাঈদের লাশ নিয়ে মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। এরপর লাশ তাদের কাছ থেকে পুলিশ হেফাজতে নিলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়। লাশের দাবিতে আবারো বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মডার্ন মোড় থেকে ক্যোম্পাসের দিকে পুলিশের সাজোয়া গাড়ি ও কয়েক শ’ পুলিশ কর্ডরন করে আসতে থাকলে শিক্ষার্থীরা আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তারা বিক্ষোভ নিয়ে ক্যাডেট কলেজের প্রধান গেটের সামনে গিয়ে পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পুলিশ সাজোয়া যানসহ পিছু হটতে থাকে।
ক্যাডেট কলেজ পোস্ট অফিসের সামনে গেলে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে আসে এক প্লাটুন বিজিবি। তাদেরকে পিছু হটতে বাধ্য করে তারা। পরে তারা মডার্ন মোড়ের আশপাশে অবস্থান নেয় এবং লাশের দাবি করে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তাদের সেখান থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো: মনিরুজ্জামান জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অন্তত ১০ পুলিশ আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে নিহতের বাড়ি পীরগঞ্জের জাফরপাড়ায় চলছে শোক। তার বাবা মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয়কর্মী বলে জানা গেছে।