মানুষের মস্তিষ্ক এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যময়। তবে এর জটিল কর্মকাণ্ডের অংশবিশেষ ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে।
তাদের মধ্যে কথোপকথনের সময় গ্লিয়াল কোষ তাদের পুষ্টি এবং তরল সরবরাহ করে।
কিন্তু তখনও কেউ ভাবতে পারে না যে সেই বিশ্রামের সময় আসলে ক্ষণস্থায়ী হতে চলেছে। মস্তিষ্কের গভীরে থ্যালামাস ইন্দ্রিয়ের বেশিভাগ অনুভূতির রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে। মস্তিষ্কের বাকি অংশ যাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বহীন তথ্যগুলো পেছনে ঠেলে দেয়া হয়।
কিন্তু আচমকা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংবেদনশীল অ্যামিগডালা এমন এক ছবি আবিষ্কার করেছে, যা অপ্রিয় আবেগ ও স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে। আসলে একটি মাকড়সা দেখে মস্তিষ্কের মালিক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
নিরাপত্তার জন্য হাইপোথ্যালামাস শরীরকে পালানোর জন্য প্রস্তুত করে তুলছে। পিটুইটারি গ্রন্থির মাধ্যমে রক্তপ্রবাহে মেসেঞ্জার পদার্থ পাম্প করে সে এই কাজ করছে।
একইভাবে সেই নতুন ঘটনার খবর গোটা ভবনের কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন বিভাগ সেই তথ্যের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে দিচ্ছে। চাক্ষুষ তথ্যগুলো আরো ভালো করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং বিপদের মোকাবিলা করার সব সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। মোটর কর্টেক্সে পালানোর পরিকল্পনার কাজ চলছে। ব্রোকা ও ওয়ার্নিক এলাকার মতো ভাষা বিশেষজ্ঞরা মাকড়সার সেই প্রজাতির নাম কী, তা মনে করার চেষ্টা করছে। বাকি অংশগুলো পরিস্থিতি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করছে। আশপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া কী- সেই তথ্যও জনা গুরুত্বপূর্ণ।
কোম্পানির পরিচালকরা সম্ভবত প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে বিরাজ করে। কে যে সেখানে আসলে সিদ্ধান্ত নেয়, তা বলা কঠিন। অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো এই পরিস্থিতিতেও মস্তিষ্কের অনেক এরিয়া সেই প্রক্রিয়া অংশ নেয় এবং টিম হিসেবেই ভালো সিদ্ধান্ত নেয়।
এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে সিদ্ধান্ত প্রস্তুত হয়ে যায়। মোটর কর্টেক্স সঞ্চালন স্থির করে দেয় এবং সেই সঙ্কেত শরীরে চলে যায়। সবচেয়ে পুরানো বিভাগ হিসেবে ব্রেনস্টেম মেরুদণ্ডের মাধ্যমে সেই সঙ্কেত পাঠায়। ফুসফুস একবার গভীর শ্বাস নেয়ার নির্দেশ পায়। তারপর সেরিবেলামকে কাজে নামতে হয়। সেখানে জটিল সঞ্চালনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সুনির্দিষ্ট আন্দোলনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হয়।
সব বিষয় বিবেচনা করে মস্তিষ্কের নির্দেশ অনুযায়ী শরীর চিমটের মতো করে আঙুল দিয়ে মাকড়সার পা ধরে বাগানে ফেলে দিলো। এ যাত্রায় বিপদ কাটানো গেছে। কিন্তু পরের নাটকও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এভাবে মস্তিষ্কে কাজের ব্যস্ততা সারাদিন ধরে চলতেই থাকে।
আরো অনেক প্রক্রিয়া শুধু অনুমান করা যায়। কারণ মস্তিষ্ক নামের কোম্পানি বেশি গোপন কথা ফাঁস করে না।
সূত্র : ডয়চে ভেলে