কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহতদের জন্য ঘোষিত ‘১ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক’কে ‘শহিদদের রক্তের সঙ্গে তামাশা’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেন। একইসঙ্গে মঙ্গলবার চোখ ও মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এছাড়া দেশব্যাপী সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে মঙ্গলবার মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ র্যালি, সংহতি সমাবেশ, মৌন মিছিল করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সোমবার রাত ১২টার পর, মঙ্গলবার প্রথম প্রহর থেকে সারা দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে লাল বৃত্তের ছবি যুক্ত কিংবা চোখে ও মুখে লাল কাপড় বাঁধা ছবি যুক্ত করে সরকার ঘোষিত শোক পালনের নীরব প্রতিবাদ করেন। ব্যুরো ও
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
ঢাবি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, শহিদদের স্বীকৃতি না দিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছে! সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা কাদের জন্য শোক প্রকাশ করছেন? যাদের শহিদ হওয়াকে আপনারা স্বীকৃতি দিচ্ছেন না; উলটো তাদের সহযোদ্ধাদের গুম ও গণগ্রেফতার করছেন! আপনারা যদি সত্যিই শোকগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাহলে প্রথমেই যারা এ শহিদদের রক্তের জন্য দায়ী তাদের বিচার করুন। শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যায় পর্যন্ত প্রত্যেককে অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় আনুন। তাহলেই আমরা বুঝব আপনারা আসলেই শোকগ্রস্ত; শহিদদের রক্তের প্রতি আপনাদের শ্রদ্ধাবোধ আছে। তার আগে এসব মায়াকান্না দেখাবেন না।
মাসুদ আরও বলেন, আপনারা শহিদদের পরিবারকে হেনস্তা করছেন, তাদের সহযোদ্ধাদের হেনস্তা করছেন, তাদের সহপাঠীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন; আবার আপনারা শহিদদের প্রতি মায়াকান্না দেখাচ্ছেন! আমরা সরকারের এ ঘৃণ্য কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করছি।
রাবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে থেকে র্যালি বের করেন শিক্ষকরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদের পরিচালনায় সমাবেশে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব, ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন প্রমুখ বক্ততা করেন।
জাবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে একটি মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন নেসা হলসংলগ্ন শহিদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে পুনরায় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তৃতা করেন- দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম, জার্নালিজন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমান, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহামম্দ খান প্রমুখ
বরিশাল: কোটা সংস্কার আন্দোলনের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, মঙ্গলবার দেশব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক। কিন্তু আমরা মনে করি রাষ্ট্র কোনো শোক প্রকাশের ক্ষমতা রাখে না। তাই শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেনি। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাল কাপড় মাথায় বাঁধা ছবিসহ লাল প্রোফাইল পিকচার দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
টাঙ্গাইল: শহরের রেজিস্ট্রিপাড়া শাহীন স্কুলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধা পেয়ে বিক্ষোভকারীরা সেখানেই কর্মসূচি শেষ করেন। এদিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ তথ্য জানান।
কিশোরগঞ্জ: শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় জড়ো হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। সেখান থেকে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে তারা শহরের পুরান থানা চৌরাস্তা মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হন।
হবিগঞ্জ: শহরের বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র (বিকেজিসি) সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রীরা কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে বসন্ত কুমারী গোপাল চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়াও হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ শচীন্দ্র কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েরা অংশ নেন।
কেশবপুর (যশোর): কেশবপুরে সাধারণ ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে মিছিল সমাবেশ ও যশোর-সাতক্ষীরা সড়ক অবরোধ করে। কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কেশবপুরের ত্রিমোহিনী মোড়ে এসে বসে পড়েন।