কুষ্টিয়ায় আরও তিনজনের মৃত্যু, ভাঙচুর-লুটপাট চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেধক
  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে গত সোমবারের সংঘাত-সহিংসতায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর মঙ্গলবার জানা গেছে। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ছয়জন নিহতের তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। সব মিলিয়ে ৯ জন নিহতের তথ্য প্রথম আলোকে মঙ্গলবার রাতে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম। তাঁদের অধিকাংশই গুলিতে নিহত। কুপিয়ে হত্যার লাশও আছে।

এদিকে বিএনপি, জামায়াতসহ সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতির পরও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কুষ্টিয়ায়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। সর্বশেষ সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান সবুজ নামের এক বিএনপি কর্মী।

মঙ্গলবার শহরের বড়বাজার এলাকার কিছু মুদিদোকান ও সবজিবাজার সীমিত আকারে খুললেও বন্ধ ছিল অধিকাংশ দোকানপাট। সোমবার দুপুরের পর থেকে অরক্ষিত পড়ে আছে কুষ্টিয়া মডেল থানা। সন্ধ্যার পর সেখানে ভুতুড়ে পরিবেশ। সোমবার পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনার পর পুলিশ সদস্যদের থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান সেনা সদস্যরা। এরপর থানায় ব্যাপক ভাঙচুরের পর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিকেল থেকে শুরু হয় লুটপাট।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, থানা থেকে বিভিন্ন সম্পদ লুটপাটের পাশাপাশি বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদও লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তবে কী পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতে আবার ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দলে দলে লোকজন বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া হানিফের চাচাতো ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের বহুতল ভবনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে শতাধিক মানুষ বাড়ির ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়।

এ ছাড়া দৌলতপুরে এটিএন নিউজের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি শরিফুল ইসলামের ব্যক্তিগত অফিসে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে মঙ্গলবারও হামলা ভাঙচুরের খবর মিলেছে। কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের মিরপুর শহরে নবনির্মিত আলিশান বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে পুলিশ কোনো দায়িত্ব পালন না করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রছাত্রীরা শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে ও সড়কে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। সেন্ট্রাল কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশটা আমাদেরই। আমাদেরই গড়তে হবে। তাই গত কয়েক দিনের আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। আর ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বাঁশি বাজিয়ে ট্রাফিকের কাজও অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি সনাতন সম্প্রদায়ের মন্দিরগুলোতে রাতে পাহারা বসানো হয়েছে।

শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এএসআই আশরাফুল ওই এলাকায় জমি কেনাবেচার ব্যবসা করেন। এর জের ধরে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এএসআই আশরাফুল ইসলাম একজনকে দিয়ে মিজানকে ফোন করে ডেকে পাঠান। তিনি গেলে দুজনের মধ্যে একপর্যায়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় মিজানুরকে মারধর করা হলে তাঁকে রক্ষা করতে নাসির নামের এক ব্যক্তি এগিয়ে যান। তাঁকেও মারধর করেন আশরাফুল। একপর্যায়ে আশরাফুল পিস্তল বের করেন। তখন স্থানীয় লোকজন তাঁকে ধরে পিস্তল কেড়ে নিয়ে পিটুনি দেন। পরে আশরাফুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কেড়ে নেওয়া পিস্তল পরে সেনাবাহিনী গিয়ে উদ্ধার করেছে। মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছয়-সাত দিন আগেও তাঁরা (আশরাফুলরা) এসে তাঁর বাড়িতে হামলা করেছেন। আশরাফুল জমির ব্যবসা করেন। আজকে পিস্তল বের করে গুলি করতে চেয়েছিলেন তিনি। লোকজন ছিল বলে বেঁচে গেছেন বলে জানান মিজানুর। পরে লোকজন পিস্তল কেড়ে নেয়। সেনাবাহিনী এসে পিস্তলটি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

LifePharm