ব্যাংক খাতের টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে সাংবাদিকরা আগের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছেন না। এক মাস ধরে এমন পরিস্থিতির কারণে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। এর প্রতিবাদে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা বলেন, বড় ঋণখেলাপি ও অনিয়মে জড়িত ব্যবসায়ী ও ব্যাংকগুলোকে গণমাধ্যম থেকে আড়ালে রাখতে বর্তমান গভর্নর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তার প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর আগে কখনো এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতেও কোনো সমাধান না হওয়ায় আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে ইআরএফ।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে সাংবাদিকেরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। আগের মতো তারা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংক।
আবার ঋণখেলাপিদের দাপট আগের মতোই আছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক একত্রীকরণ শুরু হয়েছে।
ব্যাংক বিটের রিপোর্টার রহিম শেখ বলেন, সাংবাদিকদের জন্য আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন সাংবাদিকরা পাস ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। এর বাইরে অন্য কোথাও বা কোনো কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন না। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, এর আগেও পাস ইস্যুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে হতো। তবে ভেতরে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
ইআরএফ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের পেশাগত কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে। তথ্য পাওয়ার সাংবাদিকদের যে অধিকার তা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।